চিন্ময় ভট্টাচার্য, আমাদের ভারত, ২৯ এপ্রিল: দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। কিন্তু আর শেষরক্ষা হল না। অবশেষে বুধবার তামাম ভক্তকুলকে চোখের জলে ভাসিয়ে মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই মৃত্যু হল বিশিষ্ট অভিনেতা ইরফান খানের। মঙ্গলবারই কোলন সংক্রমণ নিয়ে সংকটজনক অবস্থায় তাঁকে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃত্যুকালে স্ত্রী সুতপা এবং দুই ছেলে বাবিল ও অয়ন ইরফানের পাশেই ছিলেন। বলিউড ও হলিউডে সমান সাবলীল ইরফানের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সিনেজগৎ। বলিউড তারকা, পরিচালকের পাশাপাশি সুজিত সরকার, অপর্ণা সেনের মত টলিউড পরিচালকরাও ইরফানের অকাল প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন।
একাধারে অভিনেতা ও প্রযোজক ইরফান খান ১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুরে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও কখনও পারিবারিক ব্যবসায় মনোনিবেশ করার কথা ভাবেননি ইরফান। বরং ছোট থেকে ক্রিকেটে মনোযোগ দেন। অনূর্ধ্ব-২৩ সি কে নাইডু টুর্নামেন্টে পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেন। আর্থিক সমস্যার কারণে আর ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি। তবে নাট্যাভিনয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন। মেধার জোরেই স্কলারশিপের টাকায় ১৯৮৪ সালে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে নাটকে এমএ সম্পূর্ণ করেন।
পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮৫ সালে পাড়ি দেন মুম্বইয়ে। সেখানে ‘চাণক্য’, ‘ভারতের খোঁজে’, ‘সারে জাঁহা হামারা’র মত একের পর এক টেলিসিরিয়ালে তিনি অভিনয় করেন। বড়পর্দায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৮ সালে ‘সালাম বোম্বে’ ছবির হাত ধরে। এরপর ‘এক ডক্টর কি মত’, ‘লং জার্নি’-র মত বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। তবে বান্ডিত-এর রত্নাকরের ভূমিকায় অভিনয় করেই পরিচিত হন ইরফান। তারপর ২০০১ সালে ‘দ্য ওয়ারিয়র’ ছবিতে অভিনয় করার পর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৫ সালে ‘রোগ’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ২০০৭-এ ‘মেট্রো’ ছবি তাঁকে সেরা সহ-অভিনেতার পুরস্কার এনে দেয়। ২০১৫-য় ‘পিকু’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন, দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে মূল ভূমিকায় তাঁর সাবলীল অভিনয় স্বাক্ষর রেখেছে।
বলিউডের পাশাপাশি হলিউডেও স্বাক্ষর রেখেছেন ইরফান খান। তাঁর অভিনীত ‘দ্য নেমসেক’,’জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’, ‘স্লামডগ মিলিওনিয়ার’,’লাইফ অফ পাই’-এর মত একাধিক ছবিতে গোটা বিশ্বে তারিফ কুড়িয়েছে। সিনে জগতে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১১ সালে ভারত সরকারের অন্যতম খেতাব ‘পদ্মশ্রী’ও পেয়েছিলেন এই স্বখ্যাত অভিনেতা। এদিন যেন সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।
ইরফান খানের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে শিল্পপতি নীতা অম্বানি এক বার্তায় লিখেছেন, ‘ইরফান খান ৫৩ বছর বয়সে মারা গেলেন। তাঁকে কোকিলাবেন ধীরুভাই অম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি গতকাল শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগে মারা গিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমারে ভুগছিলেন।’