রাজেন রায়, কলকাতা, ২৩ জানুয়ারি: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্ম বার্ষিকী ঘিরে তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষের তরফেই বঙ্গ আবেগ জয়ের মরিয়া চেষ্টা যে দেখা যাবে, তা একরকম প্রত্যাশিত ছিল। তাই কেন্দ্রের ‘পরাক্রম দিবসে’-র পালটা শনিবার নেতাজি কর্মসূচিতে দেশনায়ক শব্দের ওপর খুব বেশি জোর দিতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। তবে এদিন রেড রোডের মঞ্চ থেকে একটি বিষয় তুলে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন তিনি। দাবি করেছেন, ফের দেশের রাজধানী করা হোক কলকাতা-সহ চার শহরকে। চার রাজধানী তত্ত্বের মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণের পক্ষে সওয়াল করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে নেতাজীর মূর্তির সামনে সাইরেন বাজিয়ে দেশনায়কের জন্মমুহূর্ত স্মরণ করা হয়। এরপর শাঁখ বাজিয়ে পদযাত্রার সূচনা করেন মমতা। রেড রোডে শেষ হয় পদযাত্রা। প্রত্যাশা মতোই এই মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সুর চড়াতে দেখা যায় ‘দেশনায়ক’ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের ভূমিকার বিরুদ্ধে। রেড রোডের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুললেন, “দেশে কেন একটা রাজধানী? দেশের চার প্রান্তে চারটি রাজধানী হোক। উত্তর-পূর্বে, দিল্লিতে, দক্ষিণে এবং পশ্চিমে একটা।” দেশের চারটি প্রস্তাবিত রাজধানীতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সংসদীয় অধিবেশন বসানোরও দাবি করেছেন তিনি। কীভাবে তা সম্ভব, এদিন তার ব্যাখ্যাও দেন তিনি। তাঁর কথায়, দক্ষিণের কেরল, অন্ধ্র প্রদেশ, উত্তর এবং মধ্য ভারতের উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির কোনও একটিকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে দেশের রাজধানী দিল্লিতে সরে যাওয়ার পর, দিল্লিই এখন জাতীয় রাজনীতির ভরকেন্দ্র। কিন্তু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে সেই ‘দিল্লিকেন্দ্রিকতা’কেই ভেঙে দেওয়ার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতিবিদদের মতে, চার রাজধানী তত্ত্বের উদ্ভাবনের মাধ্যমে আসলে লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির স্লোগান ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান লিডার’কেই টার্গেট করতে চেয়েছেন মমতা। আর এই ‘ওয়ান লিডার’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতে এক সময়ে অবলুপ্ত প্ল্যানিং কমিশন ফিরিয়ে আনার দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ভারতের প্ল্যানিং কমিশন তৈরি করেন নেতাজী। ক্ষমতায় এসে দেখলাম নেতাজীর প্ল্যানিং কমিশন তুলে নেওয়া হল। করে দেওয়া হল নীতি আয়োগ। ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিশন ফিরিয়ে দিতে হবে।”