বর্ষার আগাম প্রস্তুতি শেষ উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের, তৈরি ৮১৫টি বিশেষ নজরদারি দল

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ১ জুলাই:
ভরা বর্ষায় বারে বারেই বিপদে পড়েছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে। বিগত বর্ষার মরশুমগুলিতে গৌহাটি থেকে এনজেপির মাঝখানেই প্রায় ৪০০কিমি রেলপথের বিভিন্ন এলাকা নদীর জলের তোড়ে উড়ে গেছে। উত্তরবঙ্গ ও আসামের মধ্যে বারবার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।গত ১০ বছরে একাধিকবার এমন ঘটনা উঠে এসেছে। বছর কয়েক আগের কাটিহার ডিভিশনের সুধানী টেলটার মাঝে রেল ব্রিজ ভেঙে পড়ার টাটকা স্মৃতি এখনো রয়েছে অনেকের মধ্যেই। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালেও উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের অন্তর্ভুক্ত বিজি-৩ রেললাইনে যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়।হাসিমারা, বীরপাড়, বানারহাট, নাগরাকাটা এলাকায় নদী এবং ঝোরার জলের তোড়ে নষ্ট হয় রেলট্রাকের অনেকটা অংশ।

এবার অবশ্য বর্ষা শুরুর অনেক আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিল রেল। তীব্র বৃষ্টিপাত না হলে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন রেল কর্তাদের একাংশ।উল্লেখ্য, অসম, বিহার, বাংলা, ত্রিপুরা, মণিপুর ধরলে এইমুহূর্তে সীমান্ত রেলে রেললাইনের দৈঘ্য প্রায় ৬৪০০ কিমি। গোটা এলাকার মধ্যে একদিকে ভৌগোলিকভাবে ধ্বস প্রবণ, পর্বতসঙ্কুল এলাকা যেমন রয়েছে, তেমনি ভারি বর্ষাপ্রবন এলাকা রয়েছে। আছে এনজেপি থেকে আলিপুরদুয়ারের মধ্যে ১৭০ কিমি বিপদজনক এলাকা।যেখানে অন্তত ৭০টি নদী, ঝোরা রয়েছে। বছরের ৯ মাস নদীগুলির চরিত্র একরকম। বর্ষার ৩ মাস ভয়াল ভয়ংকর হয়ে ওঠে।

তথ্য বলছে গতবছরও আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের বেশ কিছু এলাকায় বিপাকে পরে রেল। বন্ধ ছিল রেলচলাচল। সীমান্ত রেলের তরফে জানা গেছে, এবার প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতি পর্বে স্পর্ষকাতর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যাবস্থা, ব্রিজের রক্ষনাবেক্ষণ বিপদসীমা চিহ্নিতকরনের কাজ শেষ হয়েছে। ৮১৫টি বিশেষ পেট্রোলিং দল তৈরি করা হয়েছে। যাদের উপর ৬৪০০ কিমি রেলপথে টানা নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের সদস্যদের হাতে আধুনিক জিপিএস ট্রাকার, লুমিনস জ্যাকেট, বিশেষ ওয়াটারপ্রুফ জামা, রেইনকোট, সেফটি হেলমেট, বিশেষ জুতো, শক্তিশালী ফ্ল্যাসলাইট তুলে দেওয়া হয়েছে। পালা করে ২৪ ঘন্টাই প্রট্রোলিং এ থাকবে ৮১৫টি দল। বিশেষ বিশেষ কিছু পয়েন্টে থাকবে অতিরিক্ত ওয়াচম্যান। এদিকে, বর্ষায় রেল ট্রাকের ক্ষতি হলেও রেকর্ড সময়ে তা ঠিক করার ব্যাবস্থাও রাখা হচ্ছে।

সীমান্ত রেলের তরফে জানা গেছে, আপাতত ১লক্ষ কিউবিক মিটার বড় বোল্ডার রাখা হয়েছে,১৯৯ রেল ওয়াগান ভর্তি পাথর সংগ্রহ করা হয়েছে। ৮০০০ কিউবিক মিটার বালি, ৫৫ওয়াগান বালি রিজার্ভে রয়েছে। এছাড়াও ২৮টি বিভিন্ন দৈঘ্যের সার্ভিস গার্ডার, জরুরিকালীন সময়ের জন্য ২৭৫ টি আর.এস.জয়েস্ট রাখা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে সীমান্ত রেলের সবকটি ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন্দ চন্দা বলেন, রেকর্ড পরিমান বৃষ্টি যা কেউ কল্পনা করতে পারে না তেমন কিছু হলে হয়তো সবাই অসহায় হয়ে পড়ে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই করার ক্ষমতা সীমিত। তবে বৃষ্টিপাত যদি স্বাভাবিক থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোনও সমস্যা হবে না। আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। স্পর্শকাতর সবকটি পয়েন্টে টানা নজরদারি চলছে। উল্লেখ্য, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করোনা আবহে বন্ধ থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ পণ্যবাহী ট্রেন গোটা দেশ জুড়েই চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *