ডঃ প্রতীক ঘোষ
— সম্পাদক-অধিকর্তা, গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয়
আমাদের ভারত, ১২ আগস্ট: প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের নির্মম অত্যাচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচন করতে বহু ত্যাগ ও প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে আমাদের দেশ স্বাধীন হবার গৌরবান্বিত মর্যাদা লাভ করে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট।
বিদেশি শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেদিন যেন পরাধীনতা ও দাসত্বের শৃঙ্খলতার গ্লানি চিরতরের জন্য বিলীন করে এক অনির্বচনীয় জ্যোতি প্রজ্বলিত হয়েছিল প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে, যা আজও স্বমহিমায় প্রজ্বলিত। স্বগৌরবের, অন্তরের অন্ত:স্থলের আবেগের, নিজের দেশমাতৃকার আপন সন্তান, নাগরিকসুলভ পরিচয়ের সেই অবিস্মৃত স্বাধীনতার ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ অনেকটা পথ অতিক্রান্ত হয়ে ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে। যে চারা গাছ রোপিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, তা আজ মহীরুহ রূপে শাখা-প্রশাখা বিস্তীর্ণ করে মহিমান্বিত ঐশ্বর্যে ও ইতিহাসকে পাথেয় করে বিশ্বের দরবারে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে চলেছে আমাদের প্রত্যেককে।
দেশের সেই গৌরবান্বিত স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্মরণ করে সমগ্র দেশ আজ মেতেছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালনের মহতী উৎসবে। তাই স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সামিল হয়েছে ব্যারাকপুরের গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয়ও। আগামী ১৩ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহালয়ের নিজস্ব প্রাঙ্গনে আয়োজিত হতে চলেছে স্বাধীনতা সম্পর্কিত দুষ্প্রাপ্য ছবি ও তথ্যসমৃদ্ধ একটি বিশেষ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় হল – ‘স্বাধীনতার পথে ভারত’।
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য নজির। বৃহৎ আন্দোলনের প্রচলিত সবকটি ধারারই পূর্ণ প্রকাশ যেমন এখানে দেখতে পাওয়া যায় তেমনি বহিঃশত্রু বিতারণের সঙ্গে সঙ্গে উপযোগী দেশ ও সমাজ গঠনের প্রক্রিয়াও একই সঙ্গে লক্ষ্য করা যায়। তাই এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে নানান ছবি ও লেখার মাধ্যমে এই আন্দোলনের সামান্য একটি রূপরেখা প্রকাশ করবার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রদর্শনীটি আয়োজনের উদ্দেশ্য স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মহতী সন্ধিক্ষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগণিত অমর শহীদ ও ত্যাগী জনগণের প্রতি পূর্বাঞ্চলীয় গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয়ের সশ্রদ্ধ নিবেদন জ্ঞাপন করা।
তিনদিন ব্যাপী এই বিশেষ প্রদর্শনীতে থাকছে অপর একটি অভিনব বিষয়বস্তু – ‘অগ্নিযুগের বঙ্গ বীরঙ্গনাদের বীরগাথা’। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে মহিলারাও কখনো অন্তরালে থেকে কখনো প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন। অষ্টাদশ-উনবিংশ শতাব্দীতে ভারত তথা বাংলার সামাজে নারী ছিল পিঞ্জরাবদ্ধ। কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের থেকে মুক্তি পেতে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার নারীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। একদিকে যেমন তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তাকে দূরে সরিয়ে বিপ্লবের পথে এগিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের স্বামী, সন্তান ও ভাইদের, তেমনই অন্যদিকে তাঁরা কখনো ঘরের ভেতর থেকে, কখনো বাইরে বেরিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তৎকালীন সমাজে কোনঠাসা হয়ে থেকেও সেই মহীয়সী নারীরা পুরুষের পাশে থেকে নেপথ্যচারিণী হয়েই সহযোদ্ধার পরিচয় দিয়ে গেছেন, যা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তমূলক অধ্যায়।
স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি এই মহতী সন্ধিক্ষণে তাই ‘অগ্নিযুগের বঙ্গনারীদের বীরগাথা’ শীর্ষক প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলার সেই সমস্ত ৭৫জন বীরাঙ্গনা ও অগ্নিকন্যাদের প্রতি গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয় এই প্রদর্শনীটির মাধ্যমে জানাতে চলেছে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
এছাড়াও ১৫ আগস্ট দুপুর ১টায় সংগ্রহালয়ের আয়োজনায় তাদের নিজস্ব প্রাঙ্গনেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে স্বাধীনতা কেন্দ্রীক একটি বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবার জন্য ইতিমধ্যেই ব্যারাকপুর সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বহু ছাত্র-ছাত্রী অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছে।
প্রতিযোগিতাটি দুটি বিভাগে সম্পন্ন করা হবে। ৭ বছর থেকে অনূর্ধ্ব ১২ বছর বয়স পর্যন্ত বিভাগটিতে চিত্র অংকনের বিষয়বস্তু ‘স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব’ এবং ১২ বছরের উর্দ্ধ থেকে অনূর্ধ্ব ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিষয়বস্তু ‘আমার স্বপ্নের ভারত’। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পর সংগ্রহালয়ের প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হবে গাব্বেরিয়া সুন্দরবন পাপেট থিয়েটার গ্রুপের পরিবেশনায় একটি হ্যান্ড শ্যাডোগ্রাফি ও পাপেট শো।
অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীরা সাক্ষী হবে এই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানটি পরিদর্শনের। অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পর্যায়ে অঙ্কন প্রতিযোগিতার সফল অংশগ্রহণকারী ছাড়াও প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে পুরস্কার ও শংসাপত্র প্রদান করা হবে।
স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামী ১৫ আগস্ট বিগত বছরগুলির মতোই সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে সংগ্রহালয় প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর থেকেই ঐ দিন বিনা প্রবেশমূল্যে সর্বসাধারণ সংগ্রহালয় পরিদর্শন করতে সক্ষম হবেন