“আমরা বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না,“ প্রকাশ্যেই দাবি হিন্দুদের

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ঢাকা, ৬ জানুয়ারি: “পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বঞ্চনার অভিযোগ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না।“ শুক্রবার স্পষ্ট ভাষায় সাংবাদিকদের সামনে এই মন্তব্য করলেন ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের’ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ।

একটি ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনীন্দ্রবাবু ‘বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ’-এ সহ সভাপতি, ‘মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি’-র সভাপতি। তিনি ভারত থেকে আসা সফরকারী সাংবাদিক প্রতিনিধিদের এ দিন বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাতে রাষ্ট্র মূল চেতনা ধরে রাখতে পারেনি। এটা খুব দুঃখের। আমরা বাংলাদেশে নিজেদের সংখ্যালঘু বলে ভাবতে চাই না। কিন্তু রাষ্ট্র বারবার সেরকম ভাবতে বাধ্য করছে আমাদের। আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। তাহলে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়েই ভাল থাকবে।“

আইনজীবী তাপস পাল বলেন, “ভারতে কোনও রকম সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলেই তার প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া এসে পড়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদে অশান্তির জেরে ঢাকার দুর্গামন্দির এবং গৌরীয় মঠের ওপর আক্রমণ হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া সত্বেও সন্ন্যাসীরা মঠ ছাড়েননি। ’৯২-তেও বড় অশান্তি হয় এখানকার ধর্মস্থানে। ভারতে সংখ্যালঘু আইন, সংখ্যালঘু কমিশন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় আছে। বাংলাদেশে সেরকম কিছু করার দাবি তুললে তা অগ্রাহ্য হয়।“

এদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনের কর্মকর্তারা তাঁদের অসহায়তার কথা ব্যক্ত করে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর কন্যা চেষ্টা করছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার। কিন্তু নানা শক্তি তাকে ব্যাহত করছে। আমাদের বিভিন্ন সংগঠন যথেষ্ঠ শক্তিশালী। প্রশাসন আমাদের মান্যতা দেয়। কিন্তু পুজো করতে হচ্ছে পুলিশ পাহারায়। এ রাষ্ট্র তো সবার! ভারত যদি তার ৩০ কোটি সংখ্যালঘুকে দেশছাড়া করতে চায়, সেটা যেমন হয় না তেমনই এখানকার ২ কোটি
সংখ্যালঘু বাংলাদেশ ছেড়ে যাক, সেটাও কোনওভাবে কাম্য নয়।“

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মহানগর পূজা পরিষদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা আওয়ামি লিগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, ‘ইণ্ডিয়া মিডিয়া করেসপণ্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ’-এর সভাপতি বাসুদেব ধর। এ ছাড়াও ছিলেন শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার, দিলীপ চ্যাটার্জি, জয়ন্ত সেন, মিলনকান্তি দত্ত, কাজল দেবনাথ, কৃষ্ণরঞ্জন মণ্ডল, অধ্যাপক অসীম সরকার, নারায়ণ সাহা, আইনজীবী শ্যামল কুমার রায়, পূরবী মজুমদার প্রমুখ।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবশ্যিকতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রেস ক্লাব কলকাতার সভাপতি স্নেহাশিস সুর সমাবেশে বলেন, এই সঙ্কটে সংখ্যালঘুদের অধিকার কায়েম করা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গবদ্ধ প্রয়াসেই হয়ত নেতিবাচক পরিস্থিতি ঠেকানো সম্ভব। সারা পৃথিবীতে ধর্মের নামে অশান্তি হচ্ছে। কিন্তু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরাও অনেকে আছেন। তাঁরাই আশার আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে রাখছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *