ফের অনিশ্চয়তায় ভিসি-হীন একগুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ৮ জুন:বৃহস্পতিবার ফের মুণ্ডহীন হয়ে গেল একগুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়। এই সব প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী ভিসি-র মেয়াদ শেষ হল। বাড়ল অনিশ্চয়তা।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও স্থায়ী, দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নেই। ফলে, একটা চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিতে চলেছে।

এমনিতেই গত সপ্তাহে আচার্য রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বসু ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করায় প্রকাশ্যে তোপ দেগেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যপাল প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন, তাঁর সিদ্ধান্তে কোনও অন্যায় নেই। রাজ্যপাল যাঁদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁদের দায়িত্ব না নিতে শিক্ষামন্ত্রী আবেদন করলেও তাতে সাড়া দিয়েছেন মাত্র একজন। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতে।

এর সঙ্গে ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধি মেনে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সন্ধান কমিটি তৈরি নিয়ে আইনি জটিলতা। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে এ নিয়ে সোমবার মামলা হয়েছে। আবেদনকারী রাজ্য বিজেপি-র ইনটেলেকচুয়াল সেলের আহ্বায়ক পুলকনারায়ণ ধরের মতে, প্রস্তাবিত সন্ধান কমিটির যে কাঠামো হয়েছে তা শিক্ষা ও জনস্বার্থ বিরোধী। সন্ধান কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। তাঁর জায়গায় স্থান পেতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি। মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য হিসাবে নিয়োগের বিলে রাজ্যপালের আপাতত সই করার সম্ভাবনা নেই দেখেই এই পরিবর্তন আনা হল বলে মনে করা হচ্ছে। ১২ জুন শুনানি হওয়ার কথা।

২০১৯-এর ২০ ফেব্রুয়ারি হুগলির সিঙ্গুরের রানি রাসমণি গ্রিন ইউনিভার্সিটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন বিজ্ঞানী-গবেষক ডঃ আশুতোষ ঘোষ। শেষ প্রায় তিন মাস অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য ছিলেন। ফের তিনি ফিরে যাবেন তাঁর পূর্বতন দায়িত্বে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে।

অনিশ্চয়তার মাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ডঃ আশুতোষ ঘোষ বুধবার সকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, “দুটো বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে নয়া পাঠক্রম শুরু করেছিলাম। এখন ছ’টা বিষয় হয়েছে। পড়ুয়া প্রায় ৩০০। পর্যায়ক্রমে পঠনপাঠন বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। প্রথম ব্যাচ পাশ করেছে। পড়াশোনার সবটাই আমাকে দেখতে হত। আমাদের নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে।” এর পরে কে দায়িত্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালাবেন? আশুবাবুর উত্তর, “উচ্চ শিক্ষা দফতর সব জানেন। ওঁরাই অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন।“

গ্রীষ্মের বর্ধিত ছুটি ও কুড়মি আন্দোলনের জেরে বেশ কিছুদিন ব্যাহত হয়েছে সাধু রামচাঁদ মুর্মু ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন। সেখানকার অস্থায়ী উপাচার্য ডঃ অমিয় পণ্ডা বৃহস্পতিবার বলেন, “২০২১-এর ১৩ মে থেকে ২০২৩-এর ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলাম। এরপর গত ৯ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত ছিলাম অস্থায়ী উপাচার্য।”

অমিয়বাবু জানান, গত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথিশালায় থেকে গিয়েছিলাম। কারণ, মন্ত্রীর গাড়ি ভাঙ্গচুরের প্রতিবাদে আদিবাসীরা বৃহস্পতিবার ১২ ঘন্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। যান চলাচল বন্ধ থাকায় এদিন পড়ুয়ারা আসতে পারেননি। তবে, অধিকাংশ আধিকারিকই আজ উপস্থিত ছিলেন। ওঁদের সঙ্গে কথা বলে সন্ধে সাতটার পর আমি বার হলাম। ওখানকার পালা শেষ। শুক্রবার রসায়নের অধ্যাপক হিসাবে ফের যোগ দেব বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে দায়িত্ব ঝাড়গ্রামের নয়া প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছিল, ‘টিমওয়ার্কের’ মাধ্যমে তা যথাযথ করেছি।”

এর পরে কে দায়িত্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালাবেন? প্রশ্নের উত্তরে গীতার একটি শ্লোক বললেন অমিয়বাবু। এর পর আওড়ালেন রবীন্দ্রনাথের ‘ক্ষণিকা’-র বহুশ্রুত সেই উক্তি— “ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে।”

যে-সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যদের মেয়াদ বৃহস্পতিবার শেষ হল, তার মধ্যে হুগলির গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধু রামচাঁদ মুর্মু ঝাড়গ্রাম ছাড়াও রয়েছে রবীন্দ্রভারতী, বিদ্যাসাগর, রায়গঞ্জ, হিন্দি, হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ, আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য ডঃ কাজল দে-র মেয়াদও বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আচার্য-রাজ্যপাল আগেই তাঁকে আবার অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।

এগুলোর অধিকাংশেই চূড়ান্ত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ও সইয়ের এক্তিয়ার কেবল মনোনীত উপাচার্যের। কারণ, ওই চার প্রতিষ্ঠানে বাকি আধিকারিকরা সকলেই রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। তাঁদের অধিকার কেবল তদারকির মধ্যে সীমাবদ্ধ।

অন্য তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যদের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেলেও নতুন করে এখনও কাউকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সেগুলি হল বারাসত পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয়, পঞ্চানন বর্মা ও গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। বেশ কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও উপাচার্যহীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *