আমাদের ভারত, ৩০ এপ্রিল: প্রতি মাসের শেষ রবিবার ঘরে ঘরে মন কি বাত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কথা বলতে বলতে দেশের প্রধানমন্ত্রী কখন যে পরিবারের একজন সদস্য হয়ে উঠেছেন তা বুঝতেই পারেনি দেশবাসী। মোদীর মন কি বাতের সার্থকতা বোধ হয় এখানেই লুকিয়ে। তাই তো মন কি বাত অনুষ্ঠানের শততম পর্ব দলের কর্মী বাহিনীর কাছে যেমন সফল কর্ম যজ্ঞের উদাহরণ হিসেবে থাকল, তেমনি নিজের মনের গভীরে কথা বলে দেশবাসীর আরও কাছের মানুষ হয়ে উঠলেন মোদী।
এক বিশেষ ইচ্ছে থেকেই নিজের মনের কথা দেশবাসীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া প্রয়োজন মনে করেছিলেন তিনি। গত পঞ্চাশ বছর ধরে মনের ভিতর যে কথা লুকিয়ে রেখেছেন তিনি, নয় বছর আগে মন কি বাত অনুষ্ঠান তাকে সেই ইচ্ছে পূরণের সুযোগ করে দিয়েছিল। মন কি বাতের শততম পর্বের অনুষ্ঠানে এভাবেই নিজের মনের মণিকোঠার অনুভূতি তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৪ সালের দশমীর দিন থেকে এই মন কি বাত অনুষ্ঠান পথ চলা শুরু করেছিল। সে বছরেই মোদী প্রথম দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠান প্রতি মাসের শেষ রবিবার সকাল এগারোটায় অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শনের সম্প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানে মোদী যেমন নিজের কথা দেশবাসীকে বলেন, ঠিক তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কথা মন দিয়ে শোনেন। আবার প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার মত ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও এই অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন মোদী। আজকের শততম পর্বের এই অনুষ্ঠানের সেই সমস্ত পুরানো কথা মোদীর গলায় শোনা গেছে।
মোদী বলেন, ৫০ বছর আগে তিনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই। তার মনে হয়েছিল, যে দেশবাসী তার সবকিছু, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি বাঁচতে পারেন না, তাদের সঙ্গে কি তিনি কথা বলতে পারবেন না? মোদীর কথায়, “আমার এই সমস্যার সমাধান করেছিল মন কি বাত অনুষ্ঠান। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পথ দেখিয়েছিল মন কি বাত।
গত নয় বছরের একাধিক ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছ থেকে কয়েক হাজার চিঠি পেয়েছেন, লক্ষাধিক বার্তা গেছে তার কাছে। সেই বার্তা চিঠি পড়তে পড়তে আবেগে ভেসেছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিয়েছেন। মোদী বলেন, মন কি বাত তার কাছে মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের পুজো করার অন্যতম মাধ্যম। তাদের গুণের আধারকে অঞ্জলি দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম।
তিনি বলেন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা তার পক্ষে অনেক সহজ ছিল। কিন্তু ২০১৪ তে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। পৃথক কাজ, আলাদা দায়িত্ব-কর্তব্য, অন্যরকম কড়া নিরাপত্তা সহ একাধিক পরিস্থিতির মধ্যে বাধা পড়তে থাকেন তিনি। সেই কারণে প্রথম প্রথম একটা শূন্যতা কাজ করতো তার মধ্যে। সেই শূন্যতা থেকে বেরতে সাহায্য করেছে মন কি বাত।
মোদীর কথায়, মন কি বাত তার কাছে একটা উৎসবের মতো। এই উৎসব যা প্রতি মাসে হয়। এই উৎসবে মানুষের অংশগ্রহণকে উদযাপন করা হয়। এটা মঙ্গলের উৎসব। ইতিবাচক মনোভাবনার উদযাপনের উৎসব।
মোদী বলেন, মন কি বাত শুরু করার পর কতগুলো দিন, মাস, বছর কেটে গেল ভাবতেই পারছি না। মন কি বাত তার কাছে এক থালা প্রসাদের মত, যা জনগণ নামের ঈশ্বরের পায়ে অর্পণ করা হয়েছে। তাঁর কথায় ভারতীয় সমাজের বিস্তীর্ণ চাদরে মন কি বাত জপ মালার সুতোর মতো। যে মালার প্রতিটা পুঁথিকে শক্ত করে গেঁথে রেখেছে।
মোদী মনে করিয়ে দেন, মন কি বাত দেশের নারী শক্তির অনুপ্রেরণার গল্প বলেছে। মেয়েদের সাফল্য তুলে ধরতে পেরে প্রচুর প্রশংসা পেয়েছেন বলেও তিনি জানান। সরকারের একাধিক প্রকল্প বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও থেকে শুরু করে স্বচ্ছ ভারত আন্দোলন বা খাদি প্রেম, প্রকৃতি প্রেমের মতো সমস্ত কিছুই মন কি বাত এর বিষয় হয়েছে ও গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, সেলফি উইথ ডটার গোটা বিশ্বে সারা ফেলে দিয়েছিল।
মোদী বলেন, “মন কি বাতের জন্যই আপনাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে আপনাদের মাঝে আসতে পেরেছি” আবার, পরের মাসে তিনি দেখা করবেন দেশবাসীর সঙ্গে, দেশের মানুষের সাফল্য উদযাপন করবেন। ততদিন নিজেরা এবং নিজেদের প্রিয়জনদের খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন মোদী।
প্রত্যেক মন কি বাতে পরের পর্বে কি আলোচনা হবে তা তৈরি হয়ে যায় আগের পর্বেই। মন কি বাত অনুষ্ঠানে বার বার সদিচ্ছা, কর্তব্য, যথাযথ দায়িত্ব পালনের ইচ্ছা বিষয়ক আলোচনা হয়েছে। এই ইতিবাচক মনোভাবে স্বাধীনতার অমৃত কালে দেশকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলে আশাবাদী মোদী।