
সাথী দাস, পুরুলিয়া, ১৩ মার্চ: ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর প্রয়াণের এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল। তাঁর স্মৃতিতে বসল আবক্ষ মূর্তি, হল রক্তদান শিবির সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান। কিন্তু স্বামী হারানোর দগদগে ঘা আজও একই রয়ে গেছে স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুর। সবাই আছেন, কেবল তিনি নেই। এক বুক জ্বালা যন্ত্রণা নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে রয়েছেন স্ত্রী পূর্ণিমা। তাঁর বাড়িতে আজকের শোকার্ত আবহে মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাবার খুনের কিনারা হয়নি। সংবাদ মাধ্যম থেকে দূরে রয়েছে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নিহত তপনের মেয়ে।
তদন্তের কিনারা হবে বলে আশাবাদী পূর্ণিমা বলেন, “এই দিনটি ভুলতে পারবে না ছেলে মেয়েরা। মেয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে ওর বাবা সঙ্গে যেতে পারবে না। তবে, সিবিআই বড় মাথাদের জিজ্ঞাসাবাদ টুকুও করেনি। তদন্তভার নেওয়ার এগারো মাস পার হয়ে গেল। এর কারণ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না।” গত প্রায় এক বছর ধরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে ছাড়া যে অভ্যেস করে আসছেন আজও তার অন্যথা হয়নি। নিহত স্বামী তপনের ছবিতে ফুলের মালা, ধূপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানান পূর্ণিমা। স্বামীর কাছ থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ভরসা আশীর্বাদ হিসেবে চেয়ে নেন তিনি।
ঝালদায় আজ কালো দিন। ঠিক এক বছর আগে, আজকের দিন অর্থ্যাৎ ১৩ মার্চ দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন ঝালদা পৌরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। তপন কান্দু খুনের ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। ঘটনার তদন্তে নামে জেলা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। যদিও এই ঘটনায় নিহতের পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবিতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলে বিচারপতি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার মোট ৭ জন অভিযুক্ত দীপক কান্দু, নরেন কান্দু, আশিক খান, কলেবর সিং, সত্যবান পরামানিক, জাবির আনসারী, শশীভূষণ সিং জেল হেফাজতে রয়েছে। এই খুনের ঘটনাকে ঘিরেই বদলে যায় ঝালদার রাজনীতির সমীকরণ। তৃণমূলের দখলে থাকা ১২ আসন বিশিষ্ট ঝালদা পৌরসভা ছিনিয়ে নেয় কংগ্রেস। আজ তপন কান্দুর খুনের ঘটনার এক বছর পার হল। নিহত তপন কান্দুকে শ্রদ্ধা জানাতে আজ রক্তদান শিবিরে উপস্থিত হন ঝালদায় চর্চিত নাম প্রাক্তন পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল। যেখানে দুই পক্ষের মধ্যে আইনি লড়াইয়ে মুখোমুখি আদালতে হচ্ছেন। রাজ্য রাজনীতিতে চর্চিত হচ্ছে এখনও সেখানে এই ঘটনা রাজনীতিতে অন্য দিকের বার্তা দিচ্ছে? মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা।
তপন খুনে তদন্ত নিয়ে মুখ খুললেন সুরেশ। তিনি বলেন, “তপন আমার সহকর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক মত পার্থক্য থাকতেই পারে। উনি নিজেকে সামাজিক কাজে নিমজ্জিত রাখতেন। তাঁর খুনের ঘটনা আমাদেরও শোকাহত করেছে। সিবিআই তদন্ত করছে। তবে, এটা পারিবারিক খুন বলেই আমার বিশ্বাস।” যাঁর উপদেষ্টা ও তত্ত্বাবধানে আজকের কর্মসূচি সেই জেলা কংগ্রেসের সভাপতি এবং প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, “নানা ঘাত প্রতিঘাত, মামলা, পুলিশি হয়রানি, শাসক দলের শাসানির মধ্যেই কাটল। কিন্তু তপনের খুনের কিনারা হয়নি। সিবিআই শিবির করে এখানে রয়েছে। তদন্ত ঢিমে তালে চলছে। তবুও আমরা আশাবাদী। ঝালদার মানুষ খুনের কিনারা চাইছেন।”
নিহত তপনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আজ সন্ধ্যায় মোমবাতি মিছিল হয় ঝালদা শহরে। আজকের সব কর্মসূচির আয়োজক ছিল ‘তপন কান্দু মেমোরিয়াল সোসাইটি’।