বিচার ব্যবস্থার প্রতি ভরসা ফেরানোর নাম অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! আমলা থেকে বিচারপতি হবার পথটা কেমন ছিল তাঁর

আমাদের ভারত, ২১ মে: এই মুহূর্তে বাংলায় আলোচনার শিরোনামে যে নাম সেটা হলো কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এসএসসি মামলায় তাঁর দেওয়া একের পর এক নির্দেশ কার্যত সমস্ত নিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় বড় প্রতিবাদের ছক্কা। বেকার চাকরি প্রার্থীর কাছে তিনি এখন একরকম ঈশ্বর। সাধারণ মানুষের কথায় এই রকম বিচারপতি ভরসা বাড়ায় দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর, সাহস জোগায় লড়াই করার। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাকে নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। জানতে ইচ্ছে করে কেমন এই সাহসী প্রতিবাদি মানুষটার জীবনের চলার পথটা?

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় একসময় ছিলেন ডব্লিউ বিসিএস অফিসার। কিন্তু এই দুর্নীতির কারণেই নাকি সেখান থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন বলে শোনা যায়। এরপর একজন আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বিচারপতি। মিত্র ইন্সটিটিউশনের মেইন ব্রাঞ্চে পড়াশোনা করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রাজুয়েশনের পর পাঁচ বছর আইন পড়েছেন। এরপর ডব্লিউ বিসিএস পরীক্ষার জন্য বসেন এবং এ গ্রেডের অফিসার হয়ে কাজে যোগ দেন উত্তরবঙ্গে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পোস্টিং হয় উত্তর দিনাজপুরে। সেখানে জমির পাট্টার বিনিময়ে চরম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করা তার রক্তে। সেখানে রুখে দাঁড়ান তিনি। জানা যায় সেই সময় এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তাকে
শাসিয়েছিলেন। একজন ডব্লিউবিসিএস অফিসার‌ হিসেবে এইভাবে অপদস্ত হওয়া কোনোভাবেই তিনি মেনে নিতে পারেননি। তিনি বুঝেছিলেন এই লড়াইয়ে বেশিরভাগকেই আপস করতে হয়। তখনই ঠিক করেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন কিন্তু অন্য পথে এগিয়ে।

২০০৯ সাল থেকে এসএসসির অফিসার ছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সারা রাজ্যের যত মামলা রয়েছে সমস্ত তথ্য তার কাছে আসতো। ফলে এখানকার সমস্ত বিষয়ে সম্যক ধারণা রয়েছে তার। আজ সেই অভিজ্ঞতাই বিচারব্যবস্থায় প্রতিফলিত হচ্ছে তার ক্ষেত্রে বলে মনে করছেন আইনজীবী মহলের একটা বড় অংশ।

প্রথমদিকে অন্যান্য মামলা দেখলেও পরে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলাগুলি দেখতে শুরু করেন। সেখান থেকে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলা তার এজলাসে এসে পৌঁছায়। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বিচারপতি যিনি দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, “আমার মাথায় বন্ধুক ধরতে পারেন, আমি মরতে রাজি, কিন্তু কোনো দুর্নীতি দেখে আদালতে কখনো চুপ করে থাকবে না।”

শোনা যায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যেমন শিক্ষকদের দুর্নীতি মেনে নিতে পারেন না আবার তিনিই শিক্ষকরা বিপাকে পড়লে সহ্য করতে পারেন না। আইনের হাত ধরে রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলের শিক্ষিকার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এই বিচারপতি। আবার ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত বীরভূমের নলহাটির শিক্ষিকার প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়ার রায় তিনি দিয়েছেন। আবার তার নির্দেশেই সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *