আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ২৪ জানুয়ারি: রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি বিধানসভার জামতলায় জনসভা করতে আসেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা রাজ্যের যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দুপুর ঠিক দুটোয় তিনি আসেন সভা মঞ্চে। আর সেই সভামঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখার সময় এদিন শুভেন্দু অধিকারী ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নজিরবিহীন আক্রমন করেন অভিষেক। পাশাপাশি শনিবার কলকাতার ভিক্টোরিয়ার সামনে সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন অভিষেক। এদিনের সভায় অভিষেক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, জেলা তৃণমূলের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী, জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি শওকত মোল্লা সহ জেলা তৃণমূলের অন্যান্য নেতৃবর্গ ও বেশ কয়েকজন বিধায়ক। তবে সভামঞ্চে জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলের অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
এদিন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক বলেন, “গতকাল কলকাতায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তাঁকে সেখানে আমন্ত্রণ করে অপমান করা হয়েছে। সেখানে সভার পরিবেশ কুলশিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বাংলার সংস্কৃতি রক্ষা করতে নিজে বক্তৃতা না দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন।” এর পাশাপাশি এদিন মঞ্চ থেকে সারদা প্রধান সুদীপ্ত সেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে যে চিঠি পাঠিয়েছেন সেই চিঠিতে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বলে জানান অভিষেক। নিজেই সেই চিঠি মঞ্চ থেকে দর্শকদের উদ্দেশ্যে দেখিয়ে অভিষেক শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে বলেন, “সারদা কর্তা নিজের চিঠিতে লিখেছেন কে তাঁর থেকে টাকা নিয়েছে। তাহলে তোলাবাজ কে? ঘুষখোর কে? দু নম্বরি কে? মির্জাফর কে? মানুষের সাথে বেইমানি করেছে কে? দশ বছর খেয়ে মধু মির্জাফর এখন সাজছে সাধু।” এদিনের মঞ্চ থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অভিষেক বলেন, “ আমি প্রমাণ দিচ্ছি ওর বিরুদ্ধে। আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ দে, আমি ফাঁসি কাঠে ঝুলে মৃত্যু বরণ করে নেবো। তুই করবি মৃত্যু বরণ? কথায় কথায় বলে লড়াইয়ের ময়দানে দেখা হবে। এইতো লড়াইয়ের ময়দান, জনগণের সামনেই লড়াই হোক। আমি মানুষের সামনে জনতার দরবারে দাঁড়িয়ে সুদীপ্ত সেনের চিঠি নিয়ে প্রমাণ দিচ্ছি ও ছয় কোটি টাকা নিয়েছে। শুধু তাই নয় সুদীপ্ত সেন আরও বলেছে দিনের পর দিন ওঁকে ব্ল্যাকমেল করেছে।”
এদিন পরিবার তন্ত্র নিয়ে বিজেপি নেতাদের তাঁকে বারে বারে অপমাণ করা নিয়ে তিনি বলেন, “ যারা পরিবার তন্ত্রের কথা বলছেন, তাঁদের পরিবারের একাধিক সদস্যরা রাজনীতিতে রয়েছে। আমি বলছি আমি আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আমার পরিবারের কেউ রাজনীতিতে আসবে না। যদি কেউ আসে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেবো। আর প্রধানমন্ত্রীকে বলবো এ বিষয়ে সংসদে একটা বিল আনতে। কোনও মন্ত্রী, সাংসদ কারোর পরিবার থেকেই দ্বিতীয় কেউ রাজনীতি করবে না। আমি কথা দিচ্ছি আমার পরিবার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কেউই রাজনীতি করবে না। আর কেউ সে কথা বলতে পারবেন? যারা আজ পরিবারতন্ত্রের কথা বলছেন?” তাঁর নাম না নিয়ে যারা তাঁকে আক্রমন করেন তাঁদের বিরুদ্ধে অভিষেক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “আমার নাম না নিয়ে ভাইপো তোলাবাজ, ভাতিজা তোলাবাজ বলে কেন আক্রমন করছেন? ভাববাচ্যে নয়, সাহস থাকলে নাম নিয়ে বলুন। আমি উত্তর দিতে প্রস্তুত আছি। আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ থাকলে নাম নিয়ে বলুন। প্রমাণ দিতে পারলে ইডি, সিআইডি লাগাতে হবে না। আমি নিজেই ফাঁসির মঞ্চে ঝুলে পড়বো।”
এদিন শুভেন্দুর পাশাপাশি শোভন চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কেও তোপ দাগেন অভিষেক। তিনি বলেন, “একজন তিন বছর ঘুমিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে বলছে অভিষেককে জিতিয়ে আমি ভুল করেছি। ও জেগেছিল বলে আমি সেবার পঁচিশ হাজারে জিতেছিলাম, আর যখন ঘুমিয়েছিল তখন আমি সাড়ে তিন লাখ ভোটে জিতেছি। সারদা থেকে ও টাকা নিয়েছে। তোয়ালে জড়িয়ে টাকা নিয়েছে।” এছাড়াও এদিন বংলার উন্নয়ন নিয়ে যারা তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমন করছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “উন্নয়নের নিরিখে লড়াই হোক। দশ শূন্য গোল দেবো। আরও বলি যারা বাংলার উন্নয়ন চোখে দেখতে পাচ্ছেন না তাঁদের জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছানিশ্রী নামে আরও একটা প্রকল্প করবেন। তাঁদের চোখের ছানি কেটে দিলে বাংলার উন্নয়ন দেখতে পারবেন।” এসবের পাশাপাশি এদিন মঞ্চ থেকে এই জেলার ৩১টি বিধানসভার সবকটিতে আগামী নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীকে জেতানোর আহ্বান জানান।