
রাজেন রায়, কলকাতা, ৫ আগস্ট: লকডাউনে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন না চলায় এবং স্বল্প সংখ্যক বাসের কারণে শহরে আসতে পারছেন না অনেক হকারই। ফলে ব্যবসা রীতিমত লাটে উঠেছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে এই সময়ের জন্য তাঁদের আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করেছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু ফেডারেশনের কাছে চাওয়া হিসেবের তথ্যে রীতিমত ভিরমি খাওয়ার অবস্থা প্রশাসনের। তার পরে পুলিশ পুরসভার যৌথ সমীক্ষায় শহরে হকারের সংখ্যা বেরোল মাত্র ৩২ হাজার।
কিন্তু এই তথ্য মানতে নারাজ ন্যাশনাল হকার্স ফেডারেশন। তাঁদের মতে সংখ্যাটা ২ লক্ষ ৭৫ হাজার। কিন্তু ভালভাবে খতিয়ে দেখেও সেই সংখ্যার ধারেকাছে পৌঁচ্ছছে না পুলিশ-পুরসভার যৌথ সমীক্ষা। আর তাই সমীক্ষায় ধরা পড়া ৩২ হাজার হকারের ভাগ্যেই আগামী দিনে জুটতে চলেছে আর্থিক সুবিধা। বাকিরা আপাতত সেই সুবিধার আওতার বাইরে।
জুলাই মাসে কলকাতা পুরসভা শহরে এই হকার সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই মত পুরসভার পার্সোনাল বিভাগ হকার সমীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করে ৬২ জন আধিকারিককে সেই সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় থানার পুলিশ ‘ফিল্ড সার্ভে’ করবে বলেও ঠিক হয়। এরপর জুলাই মাসের শেষদিকে পুলিশের রিপোর্ট জমা পড়ে লালবাজারে আর পুরসভার আধিকারিকদের রিপোর্ট জমা পড়ে পুরকমিশনারের কাছে। সেই দুই সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায় কলকাতার বুকে হকারের সংখ্যা মাত্র ৩২ হাজার।
এবার এই হকারদের আর্থিক কল্যাণ সাধনের সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা পুরনিগম কর্তৃপক্ষ। এমনি কেন্দ্র সরকারের তরফে লকডাউনের জেরে দেশের ৫০ লক্ষ স্ট্রিট হকারদের এককালীন ১০ হাজার টাকা কম সুদে ঋণ দেওয়ার যে কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সেই ঋণ যাতে এই ৩২ হাজার হকার পান, তা নিয়েও সচেষ্ট হয়েছে কলকাতা পুরসভা। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কি ধরনের আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া সম্ভব তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু পুলিশ-পুরসভার দেওয়া এই সংখ্যার বিরোধিতা শুরু করেছে ন্যাশনাল হকার্স ফেডারেশন।
ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি শক্তিমান দাসের দাবি, এমনিতেই লকডাউনের জেরে লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকার দরুণ আর বেসরকারি বাস পরিষেবা ঠিক ভাবে না চলার কারণে শহরে হকাররা আসতেই পারছেন না। তাই আসল সংখ্যাটার হদিশই পায়নি। সংখ্যা কম দেখালে যাতে আর্থিক প্যাকেজ কম দিতে হয় তার জন্য প্রশাসনের নির্দেশেই বহু হকার ভাইদের বাদ দিয়ে গিয়েছে পুলিশ পুরসভার যৌথ সমীক্ষা।
শক্তিমান দাসের দাবি, বর্তমানে বৃহত্তর কলকাতা, সল্টলেক ও বিধাননগর মিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষ ৭৫ হাজারের কাছাকাছি হকার রয়েছে। হকার্স সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা না করে এই ধরনের সমীক্ষা করেছে পুরসভা আর পুলিশ। যেখানে ২০১৫ সালের হকার সার্ভেতে ৫৯ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল, সেখানে ৫ বছর পর সংখ্যা কমে যায় কী করে! তারা এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন।