সাথী দাস, পুরুলিয়া, ১১ সেপ্টেম্বর: পুরুলিয়ার কাশীপুর পঞ্চকোট রাজপরিবারে শুক্রবার থেকেই দেবীর বোধন। আক্ষরিক অর্থে শুরু হয়ে গেল পুজো। সকালে রাজবংশের কুলদেবী রাজরাজেশ্বরী মাতার ঠাকুর দালানে শাস্ত্রীয় মন্ত্রচ্চারণে সূচনা হল প্রায় দুই হাজার বছরের প্রাচীন শারদ উৎসব।পঞ্জিকা মতে এদিন ছিল আদ্রা নক্ষত্রযুক্ত কৃষ্ণা নবমীর বোধন। পরম্পরা মেনে এদিন থেকে কাশীপুর রাজবাড়িতে অষ্টধাতুর চতুর্ভূজা দেবীর আরাধনা শুরু হয়ে যায়। হাজার বছরের নিয়ম মেনে বিগ্রহের বিশেষ স্নান পর্বের পর শুরু হয় পূজার্চনা। পুজো-পাঠের পর ছাগবলি হয়ে এ দিনকার মতো শেষ হয় আরাধনা। যদিও সন্ধ্যের সময় আরতি পর্ব চলে নিত্যদিনের মতো।
কোভিড আবহে প্রাচীন নিয়ম রীতি মেনেই পুজোর শুরু হয় বলে জানান রাজবংশের পক্ষে সোমেশ্বর লাল সিংহ দেও। তিনি বলেন, “এদিন বহিরাগতদের জন্য ঠাকুর দালানে প্রবেশ বন্ধ ছিল। আজ থেকে সাত দিন অর্থাৎ মহালায়া পর্যন্ত চলবে বিশেষ পুজো। এরপর সাধারণ পুজো চলবে। পরের অমাবস্যা থেকে ৯ দিন ধরে মোট ১৬ দিন বিশেষ পুজো হবে।”
কাশীপুর রাজ বংশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দুই হাজার বছর আগের ঘটনা। তত্কালীন জঙ্গলমহলের রাজা গুলেল সিংহকে পরাজিত করে চাকলা পঞ্চকোট নামে রাজত্ব স্থাপন করেছিলেন দামোদর শেখর সিং দেও। তাঁর রাজত্ব কালে অষ্টধাতু দিয়ে নির্মিত চতুর্ভূজা দেবী রাজরাজেশ্বরী দেবী শিখরবাসিনীর আরাধনা শুরু করেন। রামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন, দামোদর শেখরও রঘু বংশের ক্ষত্রকূলজাত ধারনগরের মহারাজা বিক্রমাদিত্যের বংশধর। সেই প্রথা মেনেই পুজোর সূচনা করেন তিনি। বিস্তীর্ণ এই এলাকার অন্যতম প্রাচীন পুজোর সঙ্গে কালে কালে যুক্ত হয়েছে ইতিহাসের নানা উপাদান। পরবর্তীকালে রাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিং দেও এক ফলক নামায় দেব-দেবীর জন্য পৃথক পৃথক সম্পত্তির ব্যবস্থার করেন। দেব-দেবীর পক্ষে সেই সম্পত্তির দেখভালের জন্য একজন সেবাইত হলেন জগদানন্দ প্রসাদ সিং দেও।
কূল পুরোহিত গৌতম চক্রবর্তী জানালেন, কৃষ্ণা নবমী থেকে মোট ষোল দিন বিশেষ পুজো চলবে। মহাসপ্তমী ও মহাষ্টমীতে বিশেষ স্নান পর্ব চলে। এখানে একটি পাত্রে জল রাখা থাকে। তার ভিতরে একটি ছোট্ট ছিদ্র যুক্ত পাত্র থাকে। ওই ফুটো দিয়ে একবার জল ভর্তি হয়ে গেলে ওটাকে একপাট বলে। প্রাচীন রীতি মেনে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণের নির্ঘণ্ট এইভাবে ঠিক হয়। এই সময় নির্ঘণ্ট নির্ধারিত হয়। পুজোর এরকম গুপ্ত কতকগুলি নিয়ম রয়েছে যা সারা ভারতে আর কোথাও এর মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না।
দেবী বাড়িতে উপস্থিত কূল পুরোহিত ও রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সন্ধি ক্ষণের সময় সোনার থালাতে রাখা সিঁদুরের উপর মা অধিষ্ঠান হয়ে পায়ের ছাপ দিয়ে যান। অবিশ্বাস্য হলেও এটা ঘটনা এবং চিরসত্য। পূর্ব পুরুষদের দেওয়া মায়ের স্বপ্নাদেশে এই ঘটনা ঘটে চলেছে। এটাই এই বংশের পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।