কাঁকসার বনকাটিতে পরিত্যক্ত বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ৫ বছর পর ধৃত অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ৩ জুন: পাঁচ বছর আগে কাঁকসার বনকাটিতে তৃণমূল কর্মীর তত্ত্বাবধানে থাকা বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ। আর ওই ঘটনায় অবশেষে ধরা পড়ল অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, ধৃতের নাম অমর মন্ডল, বনকাটির শ্যামবাজার কলোনীর বাসিন্দা। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে এগারো মাইল মোড় থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। শনিবার তাকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ২৩ জুলাই সকালে বনকাটির শ্যামবাজার কলোনীতে বোমা বিষ্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। বোমার তীব্রতায় বাড়ির জানলা ভেঙ্গে যায়। বাড়িটি অমর মন্ডলের তত্ত্বাবধানে থাকত এবং এখনও ছিল। ওইদিন সকালে আচমকা বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। তার সঙ্গে ধোঁয়ায় ভরে যায়। বাড়িটির জানলা ভেঙ্গে যায়। চারদিকে বারুদের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বাসিন্দারা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কাঁকসা থানার পুলিশ। পুলিশকে ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী। অভিযোগ ওঠে ওই বাড়ির ভেতর বোমা বাঁধা হতো ও মজুত রাখা ছিল। অমর মন্ডলের গ্রেফতারের দাবি জানায় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থল থেকে বোমার কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছিল পুলিশ। ঘটনায় অমর মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা দয়ের করে পুলিশ। জানা গেছে, অমর মন্ডল ওই এলাকার তৃণমূল কর্মী এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রাহুল পাতরের সঙ্গে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব। 

ঘটনার পর পুলিশের চোখে পলাতক ছিল। সম্প্রতি এগরার বোমা বিস্ফোরণের পর নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যজুড়ে বোমা বিস্ফোরণ, বোমা মজুতের মত ঘটনার মামলার পুনরায় তদন্ত শুরু হয়। এবং অভিযুক্ত পলাতকদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ। সেই মত শুক্রবার অমর মন্ডলকে কাঁকসা থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। প্রশ্ন, আগে কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি?

পুলিশের চোখে অমর মন্ডল রহস্যজনকভাবে পলাতক ছিল। যদিও গত কয়েকমাস ধরে বনকাটি পঞ্চায়েতে নিয়ম করে তার আনাগোনা রোজনামচা ছিল। অভিযোগ, গত মাস কয়েক ধরে অজয় নদে অবৈধ বালির চোরা কারবারের সিন্ডিকেটে যুক্ত ছিল। বোমা বিস্ফোরণ হওয়া বাড়িটি পুনরায় ব্যবহার করছিল অমর মন্ডল। সাতকাহানিয়া শ্মশান ঘাটে অবৈধভাবে রমরমিয়ে বালি কারবার চালচ্ছিল বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বিচারাধীন ওই বাড়িতে সন্ধ্যার অন্ধকার নামলে বহিরাগত লোকজনদের অবাধ আনাগোনা শুরু হয়। রাত ১২টা -১ টা পর্যন্ত চলছিল ওই বাড়ির ভেতর সন্দেহজনক কার্যকলাপ। গোটা বিষয়টিতে আবার পুরোনো ঘটনার স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় আশপাশের বাসিন্দাদের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, “সন্ধ্যা নামতেই বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা বেড়েছিল। অধিক রাত পর্যন্ত ওই বাড়িতে মজলিশ চলত।” স্থানীয় তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর মদত থাকায় অতঙ্কিত বাসিন্দারা পাল্টা আক্রমনের আশঙ্কায় অভিযোগ দায়ের করতে ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। এক কথায় ইদানীং তার দাপট আবারও শুরু হয়েছিল। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “আইনানুগ শাস্তি হোক।” বিজেপি নেতা অমিতাভ ব্যানার্জি বলেন, “বোমা তৈরী বর্তমান তৃণমূলের জামানায় একটা শিল্প হয়ে উঠেছে। পাঁচ বছর আগে বিস্ফোরণ হওয়া বাড়িতে এখনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ চলত। বহিরাগতদের আনাগোনা চলছিল। বালির সিন্ডিকেট চালতো। আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কিত ছিল। তাই গোটা বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করুক। আইনানুগ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” 

যদিও তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য জানান, “অমর মন্ডল দলের কোনো কর্মী নয়। পুলিশ তদন্ত করুক। আইন আইনের পথে চলবে।” কাঁকসা থানার পুলিশ জানিয়েছে, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *