আলেইদা-এস্তেফানিয়ার চন্দননগরের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান বাতিল, সরব বুদ্ধিজীবীরা

আমাদের ভারত, ২১ জানুয়ারি: চে গুয়েভারা-র কন্যা ডা: আলেইদা গুয়েভারা এবং নাতনি এস্তেফানিয়া গুয়েভারার চন্দননগরের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গেল। স্থানীয় বিপ্লবী ঐতিহ্যের উপর প্রশাসনের আরও একটি আঘাত নিয়ে সরব হল স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের একাংশ।

আইন সহায়তা কেন্দ্র সম্পাদক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং ‘প্রসঙ্গ সংস্কৃতি’-র সহ সম্পাদক শঙ্কর কুশারী এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিবেদকের কাছে শনিবার অভিযোগ করেন, “আপনারা জানেন যে বিশ্বের সর্বত্র চে গুয়েভারা একটি সাড়া জাগানো নাম । চে গুয়েভারা-র কন্যা ডা: আলেইদা গুয়েভারা এবং নাতনি এস্তেফানিয়া গুয়েভারাকে কলকাতা এবং এই রাজ্যের আরও কয়েকটি স্থানে গণসম্বর্ধনা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক সমাজ।

চন্দননগরের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও এমনই একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো চন্দননগর রবীন্দ্রভবনে এই সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হবে । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে চন্দননগর পৌর নিগম রবীন্দ্রভবন এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে কোনও ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করে একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন ।

এটা ধরে নেয়া হয় যে প্রস্তাবিত গণসম্বর্ধনার অনুষ্ঠানটি একটি রাজনৈতিক কর্ম এবং এই অনুষ্ঠান সেখানে করা সম্ভবপর হয় না। পরবর্তী সময়ে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জ্যোতির মোড় সংলগ্ন সার্কাসমাঠে এই সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো কিন্তু সেখানেও বিভিন্ন ধরনের ওজর আপত্তি তুলে সেই সভাটিও করতে দেওয়া হয় না।

একটি চিঠিতে মহকুমা শাসকের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪৬ সালের দি ফরেনার্স অ্যাক্ট এবং ১৯৪৮ সালের ফরেনার্স অর্ডার নামক দুটি আইন ও নির্দেশিকার। আশ্চর্য্যের বিষয় হল এই, যে শনিবার এখানকার সার্কাসমাঠে যে সভাটি হবার কথা হয়েছিলো সেই একই সভা একই সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উত্তরপাড়ার গণভবনে।

গতকাল দেশের এই দুই মাননীয় অতিথিকে একইভাবে সম্বর্ধনা জানানো হয়েছে বরানগরের আই. এস. আই. হল এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজও উত্তরপাড়ার অনুষ্ঠানের পর আরেকটি অনুষ্ঠান আছে কলেজ স্ট্রিটে।

আমাদের প্রশ্ন হল, মাননীয় মহকুমা শাসকের পত্রে উল্লেখিত আইন ও নির্দেশিকাগুলি কি কেবলমাত্র চন্দননগরের জন্যই প্রযোজ্য? সেই আইনের কোনও কার্যকারিতা কি বরানগর অথবা উত্তরপাড়া কিংবা কলকাতা মহানগরীতে নেই? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ?

কার্য্যতঃ মাননীয় মহকুমা শাসকের এই চিঠি এই প্রশ্নই তুলে দিলো যে ভারত সরকার প্রণীত একটি আইনকে একটি রাজ্যের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । একটি কেন্দ্রীয় আইনের সর্বজনগ্রাহ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেলো !

শহরের সকল সংবেদনশীল ব্যক্তি ও সংগঠনের কাছে আমাদের আবেদন, আমাদের শহরের বিপ্লবী ঐতিহ্যের উপর বারংবার নেমে আসা এই আক্রমণ ও আঘাতের বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবুন । প্রয়োজনে নিজ নিজ ফোরামে বিষয়টি উত্থাপিত করার উদ্যোগ নিন ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *