আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৮ ফেব্রুয়ারি: মাতৃভাষা ও ইংরেজির উপর কেন্দ্রীয় সরকারের আক্রমণ ও হিন্দি ভাষা সব সরকারি কাজে চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনল শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী বুদ্ধিজীবী মঞ্চ।
মঞ্চের ১৬তম বার্ষিকী উদযাপন হল মঙ্গলবার কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি হলে। আলোচনা সভার বিষয় ছিল ‘আক্রান্ত ভাষা ও বিপন্ন ধর্মনিরপেক্ষতা’। আলোচক হিসাবে প্রথমেই ভাষাতত্ত্ববিদ ডঃ মহীদাস ভট্টাচার্য বলেন, “দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘এক দেশ এক ভাষা’ তত্ত্ব চালাতে চাইছেন যা অনেক আগেই বাতিল হয়ে গেছে। আগামী ২৫ বছর চেষ্টা করলেও হিন্দিকে বাংলা ভাষার মতো উন্নত স্তরে আনা যাবে না।”
সাংবাদিক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্তমান বাংলা হিন্দি ও ইংরেজি মিশ্রিত হয়ে ইতিমধ্যে তার স্বাভাবিক গতি ও ছন্দ হারাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতার এতদিনকার প্রচলিত ধারণা বদলে গেছে অনেকটা। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকীকরণ অন্য জায়গার সাথে এই বাংলার এক অংশের জনগোষ্ঠীকেও প্রভাবিত করেছে। বৃহত্তর জনসমাজের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ সংযোগ আরও বাড়াতে হবে।”
৩য় আলোচক ‘সেভ এডুকেশন কমিটি’-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক তরুণ কান্তি নস্কর বলেন, “সংস্কৃত ভাষা অষ্টম তপশীলে আছে অথচ ইংরেজি নেই। ভাষা চিন্তার বাহন। উন্নত ভাষা ছাড়া উন্নত চিন্তা আসতে পারে না। নবজাগরণের উন্মেষ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এদেশে ইংরেজি ভাষার চর্চার মাধ্যমেই এসেছিল।”
প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল ব্যারিস্টার বিমল চ্যাটার্জি বলেন, “আমরা হিন্দি ভাষার বিরোধী নই। সব মাতৃভাষার বিকাশের দায়িত্ব সরকারের। একটি মাত্র অধিক ভোটে সংসদে একদিন হিন্দি ‘অফিসিয়াল ভাষা’ হিসাবে গৃহীত হয়। হিন্দুত্ববাদী ভাবনার সাথে সংযুক্ত- সব কাজে হিন্দি চাপিয়ে দেবার এই সরকারি অপচেষ্টা। এর বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন মঞ্চের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বরিষ্ঠ অ্যাডভোকেট পার্থসারথি সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ডঃ রামদাস ব্যানার্জি ও গার্গী দাসবক্সি। আবৃত্তি পেশ করেন রূপশ্রী কাহালি ও রণেন্দ্রনাথ ধাড়া।