ছেলে -বৌমা’র বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, ভগ্নপ্রায় ঘরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস, কাঁকসায় অসহায় বৃদ্ধ মা-বাবা’র শান্তিতে বেঁচে থাকার করুন আর্তি

জয় লাহা, আমাদের ভারত, দুর্গাপুর, ১৬ মার্চ: শখ করে বাড়ি করেছিলেন। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সুখে জীবন কাটাবেন। সে সুখের বদলে, ভাঙ্গাচোরা ঘরে দমবন্ধ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে বসবাস। অভিযোগ, সেবা করার বদলে নানাভাবে ছেলে-বৌমা নির্যাতন করে। ঘরবাড়ি লিখে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি, আতঙ্কে থাকেন বৃদ্ধ মা-বাবা। এমনই অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে কাঁকসা থানার আড়া কালিনগরের বৃদ্ধ দম্পত্তির। সুবিচারের দাবিতে মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ অসহায় বৃদ্ধ মা-বাবা। 

দুর্গাপুর লাগোয়া কাঁকসার কালিনগরের বাসিন্দা কেশবচন্দ্র সরকার। দুর্গাপুর রাষ্ট্রায়ত্ত অ্যালয় স্টিলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। বয়স প্রায় ৮০ বছর। বার্ধক্যজনিত রোগে জর্জরিত। অভিযোগে কেশববাবু বলেন,” চাকুরিরত অবস্থায় ১৯৭৮ সালে কালিনগরে দোতালা পাকা বাড়িটি করি। সেখানেই স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস শুরু করি। ছোটো ছেলে কর্মসূত্রে অসমে থাকত। দুর্ঘটনায় সেখানে তার মৃত্যু হয়। এখানে বড় ছেলে থাকে। ১৯৯৯ সালে চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়েছি। অবসরের বছর কয়েক পর থেকে খুব সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে দিন কাটছে।”

তাঁর স্ত্রী গীতারানি সরকার বলেন,” বড় ছেলে-বৌমা দোতালার ওপর থাকে। আমরা অসহায় বৃদ্ধ দম্পত্তির ঠাঁই হয়েছে নিচের তলার একটি ভাঙ্গাচোরা ঘরে। ঘরের ভেতর কংক্রিটের চাঙড় খসে পড়ছে। ঘরে আলো বাতাস ঢোকে না। দমবন্ধ হয়ে আসে। তার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছি। ২০১৪ সালে ছেলে-বৌমা আলাদা রান্না করা শুরু করে। আমাদের দেখভাল বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে নিজেই রান্না করতাম। কিন্তু বর্তমানে বয়সের ভারে আর পারছি না। ঘরে কুয়োয় জল তোলার মেশিন বসিয়েছিলাম। সেই মেশিনের জল নিতে দেয় না। বাইরে রাস্তার কল থেকে জল আনতে হয়। স্বামী বয়সের ভারে অসুস্থ। শয্যাশায়ী। চলাফেরা করতে পারে না।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিমাসে প্রায় ৫ হাজার টাকার ঔষধ লাগে। তার ওপর নিজেদের সংসার খরচ। আর চালাতে পারছি না।” অত্যাচারের অভিযোগে তিনি বলেন, “বড় ছেলে-বৌমা দেখভাল করে না। উল্টে বাড়ি, সম্পত্তি লিখে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট। এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছি, আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই। জীবনের শেষ পর্যায়ে একটু শান্তিতে বেঁচে থাকতে চাই। তাই প্রশাসনের কাছে সুবিচারের করুন আবেদন রেখেছি।”

যদিও কেশববাবুর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি। এদিকে খবর পেয়ে বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে যায় মলানদিঘি ফাঁড়ির পুলিশ। বৃদ্ধ দম্পতির ছেলে ও বৌমাকে থানায় ডেকে পাঠায়। 

দুর্গাপুর মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন,” বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *