রামনবমীর মিছিলে হামলার অভিযোগ, রণক্ষেত্র হাওড়া, দোকান ও গাড়িতে আগুন

আমাদের ভারত, ৩০ মার্চ:
হাওড়ায় রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র চেহারা নেয় ক্যারি রোডের কাজিপাড়া এলাকা। শোভাযাত্রায় হামলার অভিযোগে ওঠে। এরপরই বিক্ষিপ্তভাবে একাধিক সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় দোকানে, গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় বলে অভিযোগ।

রামনবমীর মিছিলে বোতল ও পেট্রোল বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। মিছিলকে লক্ষ্য করে বিয়ারের বোতল ও কাঁচের বোতলও ছেড়া হয়। এরপরেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয়ে ওঠে এলাকা। রাস্তার পাশে একাধিক দোকান ভাঙ্গচুর হয়, আগুন দেওয়া হয়। ফুটপাতের বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনায় ১০ থেকে ১৫ জন রামভক্ত আহত হয়েছেন বলে খবর। মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্র চেহারা নেয় এলাকা। বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় বলে অভিযোগ।

মিছিলকারীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর যারা হামলা চালালো তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা অঞ্জলি পুত্র সেনা সংগঠনের নেতৃত্ব অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনে সুবিধার্থে বৃহস্পতিবার অঞ্জনী পুত্র সেনা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সহ ৪২ টি সংগঠন একত্রে মিছিল বার করেছিল। পুলিশ প্রশাসনকে শান্তিপূর্ণ মিছিলকে সুরক্ষার জন্য আগাম জানানো হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের মতো এইবারেও সন্ধ্যা বাজার এলাকাতে মিছিল প্রবেশের পরই মিছিলে হামলা চালানো হয়। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাদের হুঁশিয়ারি, যদি অবিলম্বে মিছিলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে তারাও প্রতিরোধের পথে হাঁটবেন। তারা প্রশ্ন তোলেন হিন্দুরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করলে কিসের সমস্যা? গত বছরেও এই সন্ধ্যা বাজার এলাকাতেই মিছিলে কাঁচের বোতল ছড়ার ঘটনা ঘটেছিল যা নিয়ে পরবর্তীতে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়।

বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূলের উস্কানি ও পুলিশের অতি সক্রিয়তায় এই ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এলাকায় ব্যারিকেড তৈরি করেছে, প্রচুর বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

অন্যদিকে গোটা বিষয়ে বিজেপির ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “আমি দাঙ্গা কারীদের প্রশ্রয় দিই না, দেশের শত্রু মনে করি। হাওড়া প্রথম থেকে ওদের টার্গেট ছিল। তাঁর কথায় বারবার একই চেষ্টা চলছে। আজকেও হাওড়ায় দাঙ্গা করেছে। আমি বারবার বলেছি রামনবমীর মিছিল আটকাবো না। আপনারা যান শান্তিপূর্ণভাবে করুন। আমাদের পার্টিকেও বলেছি, পুলিশকে ডাইরেক্ট নির্দেশ দেওয়া ছিল। একদিকে যেমন অন্নপূর্ণা পূজা চলছে অন্যদিকে মুসলিমদের রমজান মাসের রোজা চলছে। বারবার বারণ করেছিলাম। আমি তো ওদের বন্ধ করিনি। বাইরে থেকে ভাড়া করে গুন্ডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে দাও, দাঙ্গা লাগিয়ে দাও? অনুমোদিত রুট পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও দাবি মমতার। তাঁর কথায় তোমাকে মিছিল করতে কেউ বাধা দেয়নি। তোমায়, তলোয়ার, বুলডোজার নিয়ে মিছিল করার অধিকার কে দিয়েছে? ওরা বুলডোজার ব্যবহার করেছে। জবাব তোমায় দেবো। তোমার রুট পরিবর্তন করলে কেন? তুমি আন অথরাইজ রুটে গিয়েছো, ইচ্ছে করে একটা কমিউনিটিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য, হামলা করার জন্য। হামলা করে কেউ ভাব, মামলা করে রেহাই পাবে। হামলাই কর মামলাই কর জনতার আদালতে টিকবে না, ফন্দি।”

মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা দিয়ে ও ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার টুইট করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হয়ে রামনবমীর দিন একটা সমাজকে দু’ভাগে বিভক্ত করতে উস্কানি দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর থেকে লজ্জার কিছু হতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির গায়ে সাম্প্রদায়িকতার কাদা লাগাতে গিয়ে নিজের আসল সাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রমাণ দিলেন। ধিক্কার জানাই। তিনি অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দলের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। মিছিল সহ সমস্ত অনুষ্ঠানের অনুমতি ছিল। আর হাওড়া ময়দানে যাওয়ার ওটাই একমাত্র রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়েই যাবার কথা ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলছেন তা সর্বৈব মিথ্যে।

অন্যদিকে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন এই ঘটনায়। তিনি লিখেছেন, “রামনবমীর মিছিলে হামলা, না বাংলাদেশ নয়, নবান্ন যে জেলায় অবস্থিত সেই হাওড়ায়। এখনো চোখ বন্ধ করে বসে থাকবেন? পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার যা হাল তাতে রামনবমী শোভাযাত্রা নির্বিঘ্নে সম্ভব নয়। প্রকাশ্যে মৌলবাদীরা ইট পাটকেল ছুড়ছে, ভক্তদের গাড়িতে আক্রমণ করছে। পুলিশকে আক্রমণ করছে। এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলবেন?”

https://fb.watch/jBqpqsUcqI/?mibextid=RUbZ1f

অন্যদিকে,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাওড়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে আবেদন করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে প্রয়োজন কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here