৭০ পাতার সুইসাইড নোটে খুনের পরিকল্পনা লিখে পর পর ২ খুন-আত্মহত্যা অমিতের

রাজেন রায়, কলকাতা, ২৩ জুন: যে কোন টানটান উত্তেজনাকর থ্রিলারকে হার মানাবে ফুলবাগান কাণ্ড। ঠিক যেন পরতে পরতে রহস্য। মৃত অমিতের পাশ থেকে ৭০ পাতার সুইসাইড নোট উদ্ধার করে রীতিমতো চোখ ছানাবড়া পুলিশের। তাতেই এই ঘটনার নেপথ্য রহস্য অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।

ওই সুইসাইড-নোট পড়ে পুলিশ বুঝতে পেরেছে,
রীতিমত ঠাণ্ডা মাথায় বহুদিন ধরে পরিকল্পনা মাফিক সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে স্ত্রীকে খুন করে এসে তারপর কলকাতায় শাশুড়িকে খুন করে। শ্বশুরের দিকে গুলি চালালেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি বেঁচে যান। এমনকি সুইসাইড নোটে স্ত্রীকে খুনের উল্লেখ থাকায় সোমবার রাতেই বেঙ্গালুরু পুলিশকে সতর্ক করে কলকাতা পুলিশ। বেঙ্গালুরুর ডিসিপি (হোয়াইটফিলড) নিজেই টিম নিয়ে ছুটে যান শিল্পী আগরওয়ালের বাড়িতে। সেখানে শিল্পীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়।

ফুলবাগান কাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রথমেই মৃত অমিত-শিল্পীর সন্তানের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। অমিতের আদি বাড়ি উত্তরপাড়ার স্টেশন রোডে। এই তথ্য জানতে পেরেই উত্তরপাড়ায় অমিতের দাদার বাড়িতে খোঁজ করেন তদন্তকারীরা। সেখানেই খোঁজ মেলে অমিত-শিল্পীর সন্তানের। জানা যায়, সোমবার স্ত্রীকে খুনের পর বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা বিমানে ফিরে প্রথমে উত্তরপাড়া গিয়েছিল অমিত। ছেলেকে সেখানে দাদার কাছে রেখে শ্বশুরবাড়ি আসে সে।

এদিকে সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে স্ত্রী শিল্পী আগরওয়ালকে খুনের আগে ব্যাপক বচসা এবং ধস্তাধস্তি হয় অমিত আগরওয়ালের সঙ্গে। কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়েই সোমবার রাতে বেঙ্গালুরুর হোয়াইটফিল্ডের মহাদেবপুরমের অভিজাত ব্রিগেড মেট্রোপলিস অ্যাপার্টমেন্টে ছুটে যান বেঙ্গালুরুর ডিসিপি। তালা ভেঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকেই পুলিশের চোখে পড়ে গোটা ফ্ল্যাট লন্ডভন্ড। গোটা ঘরে মারপিট, ধস্তাধস্তির চিহ্ন। ফ্ল্যাটে ঢোকার মুখেও মারামারির চিহ্ন। তা থেকে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, শিল্পী হয়তো অমিতকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে রান্নাঘরেও সমস্ত জিনিস পত্র ছড়ানো ছেটানো পেয়েছে পুলিশ। রয়েছে ভাঙ্গাচোরা তুবড়ানো বাসনপত্র। শোওয়ার ঘরের কাছে শিল্পীর দেহ পায় পুলিশ। তবে শিল্পীকে গুলি করে নয়, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। যদিও কী দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

তদন্তে জানা গিয়েছে, পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টান্ট অমিত এবং শিল্পীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই সম্পর্কের অবনতি হয়। এরপর শিল্পী বেঙ্গালুরুতে থেকে যান আর অমিত কলকাতায় চলে আসেন। বেঙ্গালুরু আদালতেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল। তাই মামলার সময় সেখানে যেতে হত অমিতকে। পুলিশ শিল্পীর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, অমিত এবং শিল্পীর ছেলে থাকত শিল্পীর সঙ্গে। কিন্তু নিজের ছেলেকে খুব ভালবাসতেন অমিত। তাই সেই ছেলেকে নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করছিলেন। মা হওয়ার সুবাদে শিল্পীর তাতে সায় ছিল না। তাই ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেঙ্গালুরুতে যেতে হত অমিতকে। অমিত সেখানে গেলেই শিল্পীর সঙ্গে বচসা হত। তার মধ্যে ছেলের অধিকারের কথাও উঠত বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।
ছেলেকে হুগলির উত্তর পাড়ায় নিজের ভাইয়ের কাছে রেখে ফুলবাগানে শ্বশুরবাড়িতে আসেন। সেখানেও প্রথমে শ্বশুর সুভাষ ঢনঢনিয়া ও শাশুড়ি ললিতা ঢনঢনিয়ার সঙ্গে ডিভোর্স সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বচসা শুরু করেন। তবে তিনি ইতিমধ্যেই স্ত্রীকে খুন করে এসেছেন, তা শ্বশুর-শাশুড়িকে জানতে দেননি। তারপরই শাশুড়ি ললিতাকে গুলি করে খুন করেন অমিত। গুলি চালান শ্বশুর সুভাষ ঢনঢনিয়ার দিকেও। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি বেঁচে যান। তারপর নিজেও আত্মহত্যা করেন অমিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *