সম্প্রীতির অন্যন্য নজির, পানাগড়ে রামনবমীর শোভাযাত্রায় পূণ্যার্থীদের জন্য জলছত্র, পুষ্পার্ঘ্য মুসলিম যুবকদের

জয় লাহা, আমাদের ভারত, দুর্গাপুর, ৩০ মার্চ: সম্প্রীতির নজির। বিভেদ ভুলে রামনবমীর শোভাযাত্রায় জল, সরবত ও মিষ্টি খাওয়ালেন মুসলিম যুবকরা। শুধু তাই নয়, হাতে রামনবমীর ঝান্ডা নিয়ে শোভাযাত্রায় পা মেলালেন। আর মুখে, ‘রাম আমাদের হৃদয়ে, আমাদের ঐতিহ্য, এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি।’ বৃহস্পতিবার এমনই নজিরবিহীন সম্প্রীতির ছবি ধরা পড়ল দুর্গাপুরের পানাগড়ে। 

রামনবমীতে অশান্তির আশঙ্কা প্রতিনিয়ত উঠে এসেছে। অস্ত্র নিয়ে মিছিলে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারিও হয়েছে বহুবার। এমনকি গেরুয়া শিবিরের নতুন করে শোভাযাত্রা বাতিলও করা হয়েছে। সেসব জল্পনায় জল ঢেলে সম্প্রতির নজির সৃষ্টি করল পানাগড়ের রামনবমীর শোভাযাত্রা। প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে রামনবমী উপলক্ষে রীতিমতো উৎসব চলছে গোটা পানাগড়ে। রাস্তার দু’পাশে গৈরিক ঝান্ডা তরতরিয়ে উড়ছে। তার সঙ্গে বিভিন্ন মন্দিরে রাম বন্দনা। কোথাও রাম নাম সংকীর্তন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানাগড়ে বিভিন্ন মন্দিরে রাম পূজনের পাশাপাশি হোম যজ্ঞের আয়োজন ছিল। তার সঙ্গে পানাগড় বাজারের বিভিন্ন জায়গায় নরনারায়ণ সেবা, জলছত্র। গোটা বাজার ছিল উৎসব মুখর। রাজনীতির রং মিলেমিশে একাকার। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ সামিল ছিলেন এদিন শোভাযাত্রায়। প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ শোভাযাত্রায় সামিল ছিলেন। এদিন পানাগড় রনডিহা মোড় থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। রামনবমীতে সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করে কাঁকসা দানবাবা সেবা কমিটি। এদিন সকাল থেকে পানাগড় দার্জিলিং মোড়ে, পাঠান পাড়ায় রীতিমতো আখড়া তৈরী করে পথ চলতি পুন্যার্থীদের ঠান্ডা সরবত ও জল, মিষ্টি খাওয়ানো শুরু করে। এদিন পানাগড়ে বিকেল তিনটে নাগাদ শোভা যাত্রা বের হয়। গোটা পানাগড় বাজারে শ্রীরামচন্দ্রের ট্যাবলো নিয়ে শোভাযাত্রা হয়। শোভাযাত্রায় রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সামিল ছিল। 

একই রকমভাবে বিকেলে শোভাযাত্রায় জল মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যাবস্থা করে মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকরা। তবে মূল উদ্যোক্তা ছিল কাঁকসা দানবাবা সেবা কমিটি। শুধু তাই নয়, শোভাযাত্রায় পূণ্যার্থীদের পুষ্প বৃষ্টি করে অভ্যর্থনা জানায় মুসলিম যুবকরা। এমনকি হাতে রামনবমীর ঝান্ডা নিয়ে শোভাযাত্রায় পা মেলালেন মুসলিম যুবকরা। আর মুখে, ‘রাম আমাদের হৃদয়ে, আমাদের ঐতিহ্য, এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি।’

দানবাবা সেবা কমিটির চেয়ারম্যান পিরু খান জানান,
“ঈদ, মহরমে সকল সম্প্রদায় যেমন উৎসব আনন্দে সামিল হয়। হিন্দু ভাইয়েরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তেমনই রামনবমীতে আমরা আনন্দের পাশাপাশি পুন্যার্থীদের সরবত, জল মিষ্টি খাইয়ে উৎসবে সামিল হই। রাম আমাদের হৃদয়ে। আমাদের ঐতিহ্য। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ভারতীয় ঐতিহ্য আমরা সকলে রক্ষা করব। এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি।”

বিজেপি নেতা রমন শর্মা জানান, “পানাগড়ে পরম্পরায় রামনবমীতে সম্প্রীতির বার্তা বহন করে। রামনবমীর ঝান্ডা তৈরী করেন আশিফ আলি নামে এক দরজি। তেমনই সরবত, জল খাওয়ানোর পাশাপাশি, শোভাযাত্রায় সেচ্ছাসেবকেও অংশ নেয় মুসলিম ভাইয়েরা। এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি।”

অন্যদিকে দুর্গাপুর এমএএমসিতে রামচন্দ্রে পুজা আর্চনা হয়। দুর্গাপুর মেনগেট এলাকায় দুর্গাবাহিনীর পক্ষ থেকে পথ সঞ্চালন ও লাঠি খেলার প্রদর্শনী হয়। তবে চলতি বছর মেনগেট এলাকার শোভাযাত্রায় মেয়েদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। পরিবর্তে ছিল লাঠি। এদিন রামনবমীর শোভাযাত্রায় ড্রোন ক্যামেরার কড়া নজরদারি ছিল কমিশনারেট পুলিশের। 

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here