চন্দ্রকোনার গোস্বামী বাড়িতে হল চব্বিশ প্রহর, হরিনাম মহাযজ্ঞ ও চৌষট্টি মাহান্তের ভোগ নিবেদন

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ মার্চ: চব্বিশ প্রহরব্যাপী হরিনাম মহাযজ্ঞ সঙ্গে চৌষট্টি মাহান্তের ভোগ ও প্রসাদ বিতরণ, সবমিলিয়ে এবছরও জমজমাট অনুষ্ঠান আয়োজিত হল পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার পাইকমাজিটা গ্রামের গোস্বামী বাড়িতে। চৈতন্য মহাপ্রভু ও তাঁর ১৬৪ জন পারিষদদের নামে ভোগ নিবেদনের রীতিই গোস্বামী বাড়ির নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানকে এক আলাদা মাত্রা দিয়েছে।

দোলযাত্রা তথা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জন্মতিথি উপলক্ষে হরিনাম মহাযজ্ঞ ও চৌষট্টি মাহান্তের ভোগ চালু হয়েছিল গোস্বামী বাড়ির কর্তা গৌরহরি গোস্বামী বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। এই তিথিতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনিও। যদিও গৌরহরি গোস্বামী বর্তমানে প্রয়াত। তবে তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম সেই রীতি-নীতি বজায় রেখেছেন। এই অঞ্চলে চব্বিশ প্রহরব্যাপী অখণ্ড হরিনামের আয়োজন দেখা গেলেও চৌষট্টি মাহান্তের ভোগ হয় না। এটিই গোস্বামী বাড়ির অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ।

গৌরহরি গোস্বামী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র জানান, এই ভোগের অনুপ্রেরণা তাঁরা নবদ্বীপ ধামের তাঁদের গুরুর কাছ থেকে পেয়েছিলেন। পরে তাঁর পিতার ইচ্ছাতেই এই ভোগ নিবেদন তাঁরা চালু করেন। ৩৪ বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে।

গৌরহরি গোস্বামী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতি বিশ্বরূপ বন্দয়োপাধ্যায় বলেন দোলউৎসব থেকে শুরু করে তিন দিন ধরে চলে হরিনাম সংকীর্তন। চতুর্থ দিন হয় চৌষট্টি মাহান্তের ভোগ নিবেদন। বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে সব জেলা থেকে আসা ভক্ত ও শিষ্যদের সহযোগীতায় এই উৎসব সম্পন্ন হয়।

গোস্বামী বাড়ির পূজিত বিগ্রহ রাধাবল্লভ ও শ্রীধর বিষ্ণু। এছাড়াও গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু সহ পঞ্চতত্বের পুজা হয় নিত্য। দোলযাত্রার বিশেষ অনুষ্ঠান অবশ্য চারদিনের। যার মধ্যে শেষ দিন হয় এই মহাভোগ অনুষ্ঠান। ১৬৪টি মাটির মালসায় লুচি, মালপোয়া, পুরি, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, অমৃতি ও চকলেট সহযোগে নিবেদন করা হয়। পঞ্চতত্ব, ছয় চক্রবর্তী, অষ্ট কবিরাজ, অষ্ট গোস্বামী-সহ বৈষ্ণবতত্বের তাবড় ও দিকপাল প্রভুপাদদের নামে হয় এই নিবেদন। দেওয়া হয় ১৬৪টি মাটির প্রদীপ। পংতি আকারে মালসা সাজিয়ে নিবেদন করা হয়। যা বেশ চিত্তাকর্ষক।

অনুষ্ঠানে আগত এক শিষ্য জানান এই অনুষ্ঠানে প্রতি বছর তিনি আসেন। এমনকি দূর দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত শিষ্য এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন।

এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অগণিত শিষ্য ও ভক্তের সমাবেশ ঘটে। কীর্তনের ঘরানা মেনে ভোগপদ গান গাহক। সেটিও এই অনুষ্ঠানের অন্যতম অঙ্গ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *