গুনিনের পাল্লায় পড়ে ঝাড়ফুঁকের পর দশম শ্রেণির ছাত্রীর মাথা ন্যাড়া করে জল ঢালা হল

আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ১৫ অক্টোবর: দশম শ্রেণির এক ছাত্রী স্নায়ুরোগের সমস্যায় ভুগছিল কয়েকদিন ধরে। কিন্তু রোগ সারাতে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ছাত্রীটির বাবা গিয়েছিলেন গুনিনের বাড়ি। রোগ নিরাময়ে ঝাড়ফুঁক, তুকতাকের পাশাপাশি গুনিনের নিদানে, ‘‘১৬ বছরের মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে, মাথায় জল ঢাললো তার পরিবার।” তাতে মিলল না রোগের সমাধান। লজ্জায় ঘর থেকে বাইরে বার হতে পাচ্ছে না ছাত্রীটি।

একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আজ মধ্য যুগের এই কুসংস্কারের ছায়া দেখা গেল দেগঙ্গায়। যা শুধরে দিতে অসহায় মেয়েটির পাশে দাঁড়ালো রাজ্য বিঞ্জান ও যুক্তিবাদী মঞ্চ। চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ওষুধ পত্রের যোগানের আশ্বাস দেন ওই মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, দেগঙ্গার রায়পুর নিরামিশা হাই স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাড়ি সুন্দেপুকুর এলাকায়। ১২ দিন আগে হটাত ওই ছাত্রীটির মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হতে দেখেন ছাত্রীটির পরিবার।

পরিবারের ধারণা জিনের আত্মা ভর করেছে। তা থেকে রেহাই পেতে ছাত্রীটির বাবা ছুটে যান স্থানীয় গুনিনের কাছে। জল পড়া, তেল পড়ার পাশাপাশি ঝাড়ফুঁক করেন গুনিন। তাতেও কাজ না হওয়ায় গুনিন নিদান দেন, চুল কেটে ন্যাড়া করে মাথায় জল ঢালার। সেই মতো তিনদিন আগে তা করেন ছাত্রীটির পরিবার। তারপরও মেয়ের কোন শারীরিক উন্নতি না হওয়ায় চিন্তায় পড়েন পরিবার।
মঙ্গলবার সেই ছাত্রীটির বাড়িতে যান রাজ্য যুক্তিবাদী মঞ্চের দুই সদস্য। কথা বলেন ছাত্রীটির সঙ্গে। ওই মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকারের পা ধরে ছাত্রীটি আবেদন করেন আমাকে সুস্থ করে দিন। আমি আবার পড়াশুনা করতে চাই।

ছাত্রীটির বাবা জানায়, আমরা গরিব মানুষ টাকা কোথায় পাব। তাই গুনিনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। গুলিন বলল, দোষ পেয়েছে। তাই ঝাঁড়ফুক করল। তবে আর না এবার আমার মেয়ের চিকিৎসা করাতে চাই। তার উপর করোনা প্রকোপে চিকিৎসক মিলছে না।
ছাত্রীটির মা কাঁকুতির স্বরে জানান, আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন মেয়ের সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার।
এদিন বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক বলেন, গ্রাম্য সমাজে আজও কুসংস্কার জাল বিছিয়ে রয়েছে। তাই ঝাঁড়ফুক, তুকতাক তারা আজও বিশ্বাস করেন। তা থেকে বেরিয়ে আসার আবেদন জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *