একটু বৃষ্টিতেই জলে ভাসে পায়রাডাঙ্গার বাজার, সমস্যায় পড়তে হচ্ছে দোকানদারদের

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত নদিয়া, ২৬ আগস্ট: একটু বৃষ্টি হলেই বাজারে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে জল। বাজার ঠিক মতন পরিষ্কার হয় না। দোকানদাররা দোকান করতে পারে না। মাছ বাজার ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত সমস্যা মেটেনি। পায়রাডাঙ্গার প্রীতিনগর সোসাইটির ঘটনা।

পায়রাডাঙ্গা প্রীতিনগর সোসাইটিতে প্রায় ৮০০ দোকানদার রয়েছে, যেখানে একটু বৃষ্টিতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে দোকানদারদের। অভিযোগ, বাজার ঠিকমতো পরিষ্কার পর্যন্ত হয় না। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকার ফলে বাজারের নোংরা জল বের করতে সমস্যা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে নোংরা জল বাজারে জমে থাকার কারণে বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশ ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছেন। তাঁদের আশঙ্কা দীর্ঘ সময় ধরে নোংরা জল জমতে জমতে ওখানে ডেঙ্গুবাহিত মশার উপদ্রব হবে। তাদের অভিযোগ, প্রীতিনগর সোসাইটিকে এ বিষয়ে বারবার জানালেও তারা শুধু আশ্বাসের পর আশ্বাস দিয়ে গেছেন কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

পাশাপাশি বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘ প্রায় কুড়ি বছর ধরে সোসাইটিতে কোনও নির্বাচন হয় না। বর্তমানে যে কমিটি আছে সে কমিটি চোর। অভিযোগ, ওই কমিটিতে কয়েকজন মাতব্বর আছেন, ওরা নিজেরা যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়। ব্যবসায়ী কমিটির প্রতিনিধিদের দু’বছর মেয়াদ। দু’বছর পরপর নির্বাচন হয়। কোঅপারেটিভেরও নির্বাচন বাধ্যতামূলক দু’বছর অন্তর। কিন্তু, এই প্রীতিনগর সোসাইটিতে কুড়ি বছর হয়ে গেলেও নতুন করে আর ভোট হয়নি। দু’বছরের মেয়াদ কবে শেষ হবে সেই অপেক্ষায় প্রীতি নগর সোসাইটির ব্যবসায়ীরা।

জমে থাকা জলে যে ডেঙ্গু হতে পারে এই সমস্যার কথা বারংবার জানালেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সোসাইটি। বাধ্য হয়েই জলের মধ্যে পায়ে গাম্বুট পড়ে ক্রেতাদের মাল দিচ্ছেন দোকানদাররা।

প্রীতিনগর সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি এবং বর্তমান সদস্য খোকন দে জানান, “এই প্রিতীনগর সোসাইটি প্রতি দু’বছর তিন বছর অন্তর ট্যাক্স বাড়ায়। ব্যবসাদাররা রীতিমতো ট্যাক্স দেয় কিন্তু এরা পরিষেবা দেয় না। সাধারণ ক্রেতা এবং ব্যবসাদাররা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। বর্ষা আসলে এখানে কোনও ব্যবসা সঠিকভাবে চলে না। সামনে যে মাছ বাজারটা আছে সেখানের অবস্থা আরও ভয়ানক। আজ ন’মাস হয়ে গেছে মাছবিক্রেতাদের বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে রেখেছে।

এছাড়া সামনে একটা শনি মন্দির আছে যেখানে ১০ ফুট জায়গার মধ্যে একটা ট্রান্সফরমার বসানোর চেষ্টা করছে বর্তমান প্রীতিনগর বাজার কমিটি।”

মাছ ব্যবসায়ী নির্মল বিশ্বাস জানান, “আমি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে আমরা অভিযোগ করে আসছি কোঅপারেটিভের কাছে। এই কমিটির কোনও হেলদোল নেই। এখানে ড্রেন পরিষ্কার হচ্ছে না, ড্রেন দিয়ে জল যাচ্ছে না। আমি নিজে দোকান ছেড়ে অন্য জায়গায় ভাড়া নিযয়ে ব্যবসা করছি। দীর্ঘদিন বাজার সাফাই নেই জল জমে আছে। মশা মাছির চরম উপদ্রব হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা যেকোনও সময় আমরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারি।”

মুরগি ব্যবসায়ী শুক্লা দাস জানান, “আমার দোকানের সামনে একটা পিলার তুলে আমার ব্যবসার ক্ষতিগ্রস্ত করছে এই কোঅপারেটিভের কমিটি। ন’দশ মাস হল আমরা দোকান ছেড়ে প্লাস্টিকের তলায় থাকি। বৃষ্টির ময়লা জলের মধ্যেই আমাদের দিন কাটাতে হয়।”

স্থানীয় চাল ব্যবসায়ী রানা সাহা জানান, “প্রায় কুড়ি বছর ধরে এই সোসাইটির কোনও নির্বাচন হয়নি। এখানে সমস্ত স্টলগুলো কো-অপারেটিভের। কুড়ি বছর আগে এই স্টলগুলো তৈরি হয়েছিল সেই সময় কমিটির একটা আলাদা ঐতিহ্য ছিল। বর্তমানে যারা আছে তারা সব কটা চোর। বাদল গুহ, দিলীপ গুহ এরা সব চোর। এখানে পুরো বাজারটাই কো-অপারেটিভের। এই কোঅপারেটিভে দু’বছর পরপর নির্বাচন হওয়ার কথা কিন্তু হয় না। ওরা নিজেরাই দু একজন মাতব্বর, ওরা নিজেরা যেটা সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়। ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গেও এরা গোপনে আঁতাত করে লেনদেন করছে বলে তারাও এদের সঙ্গে সায় দিয়ে দিচ্ছে এবং এরাও সুযোগের ব্যবহার করে নিচ্ছে।”

রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক তথা বাদকুল্লা হাসপাতালের প্রাক্তন চিকিৎসক ডাক্তার মুকুটমণি অধিকারী এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে সদর্থক ভূমিকা নেব। বাজার কমিটি স্কুল বা কলেজ বলুন যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে প্রত্যেকটা জায়গায় যেগুলোতে ভোট হওয়া উচিত সেই জায়গাগুলোতে মমতা ব্যানার্জির সরকার আসার পর থেকে সব জায়গাতেই মনোনীত প্রার্থী দেওয়া চলছে। এটা বেশিদিন আর চলবে না। আমরা এটা নিয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ করব যাতে সেখানে নির্বাচন করানো যায় এবং মানুষকে সুব্যবস্থা এবং তাদের যে দাবিগুলো আছে তা মেনে নেওয়া যায়।

আর বাদকুল্লা হাসপাতালের প্রাক্তন ডাক্তার হিসাবে আমি বলবো, যেহেতু বর্ষা এবার দেরিতে এসেছে সেহেতু ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার প্রকোপটা বাড়ছে। সেই জন্য আমার বিধানসভার মধ্যে এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আর যারা বাহু বলে মার্কেট থেকে লুটেপুটে খাচ্ছে এবং ন্যূনতম পরিষেবা দিচ্ছে না তাদেরকে আমরা ধিক্কার জানাই এবং জলের নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করা সহ পুরো ব্যাপারটা আমরা দেখব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *