রাজেন রায়, কলকাতা, ৯ ডিসেম্বর: যে কলেজের তিনি অধ্যক্ষা ছিলেন, সেখানেই অচলাবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, উসে উখার কে ফেক দো। এই বিষয়ে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বন্ধু শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে রাজ্যপালের কাছে নালিশ জানাতে গেলে পরদিনই তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয় রামমোহন কলেজে। আরও ২২ বছর চাকরি থাকা সত্বেও এই অপমান হজম করতে পারেননি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সন্ধ্যেয় তিনি তিন পাতার ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। ই-মেলের প্রতিলিপি গিয়েছে রাজভবনে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এবং উচ্চশিক্ষা দফতরে।
তিন পাতার ইস্তফা পত্রে বাম জমানায় তাঁকে কিভাবে লড়াই করে কলেজের কাজ চালাতে হত তা উল্লেখ করেছেন। অন্য একটি কলেজের পরিচালন সমিতি, শাসকদলের অধ্যাপক সংগঠনের পদ কেড়ে নেওয়া এবং অধ্যাপনার কাজে স্থানীয় রাজনীতিকদের লাগাতার অসম্মান তাকে ব্যথিত করেছিল বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তাঁকে সম্প্রতি যে বদলির চিঠি ধরানো হয়েছে সেখানে কারণ হিসেবে জনস্বার্থের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বৈশাখীর দাবি, জনস্বার্থে নয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাকে বদলি করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী চাইলে তাঁর চাকরি জীবনের বকেয়া টাকা নাও দিতে পারেন। তবে ২২ বছর আগে তাঁকে অবসর নিতে বাধ্য করায় তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বৈশাখী বন্দোপাধ্যায় মিল্লি আল আমিন কলেজে অধ্যাপনা নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই সমস্যায় রয়েছেন। অন্যদিকে নারদ কান্ডে সমস্যায় রয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাই দুজনেই একে অপরের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। একদিকে সিবিআইয়ের অফিসে যেভাবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছে, ঠিক তেমনই বৈশাখীর সমস্যার কারণে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে তার সঙ্গে এসেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে ওই কলেজে তার সমস্যা বাড়ছে তা সরকারকে জানানোর পরেও তাঁকেই ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় সরকার।
এদিকে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাঁর সমস্যা আরও বাড়ে। গত জুন মাসে অধ্যক্ষের পদে ইস্তফা দেন বৈশাখী। যদিও তা গৃহীত হয়েছে বলে তাঁকে জানানো হয়নি। সম্প্রতি মিল্লি আল আমিন কলেজে নানা দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন। সেখানে গিয়ে পুরমন্ত্রী বলেছিলেন, বৈশাখীকে সমূলে উৎপাটিত কর। শোভন এবং বৈশাখী দুজনে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে ফিরহাদের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। পরের দিনই বৈশাখীকে মিল্লি আল আমিন থেকে রামমোহন কলেজে বদলি করা হয়।
ইস্তফা প্রসঙ্গে বৈশাখী এদিন বলেন, “রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আমাকে উৎখাত করবেন বলেছিলেন। তার পরেই আমাকে মিল্লি আল আমিন কলেজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষক জীবনে আসল কথা হল সম্মান। যেভাবে আমাকে অপমান করা হল তারপর আর ছাত্রীদের সামনে দাঁড়ানো যায় না। সম্মান রক্ষার জন্যই আমি শিক্ষকতা ছেড়ে দিলাম।”