বালুরঘাটে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে চরম হয়রানি, গাছতলাতেই রাত কাটলো অসহায় দম্পতির

আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ২২ মার্চ: বালুরঘাট হাসপাতালে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে চরম হয়রানির অভিযোগ। গাছতলাতেই রাত কাটল দুঃস্থ অসহায় দম্পতির। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক নয়, জানালেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। করোনা আতঙ্কের জেরে ভিন রাজ্য থেকে বাড়িতে ফিরেও রেহাই মিলছে না শ্রমিকদের। ঘরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। বাসিন্দাদের দাবিমতো স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েও চরম হয়রানির শিকার অসহায় এক দম্পতি। শনিবার বিকেল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত গাছ তলাতেই রাত কাটাতে হয়েছে তাদের। পরিস্থিতি মোকাবিলাতে দেখা যায়নি কাউকেই। উদাসীনতার অভিযোগ তুলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দুঃস্থ অসহায় ওই শ্রমিক পরিবারটি। একই অবস্থার শিকার ভিন রাজ্য থেকে আসা অনান্য কয়েকশো শ্রমিকদেরও। তাদের অভিযোগ, সোমবারের আগে কোনও প্রকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর যার জেরেই চরম বিপাকে পড়েছেন ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকরা। হাসপাতালের তরফে বিশেষ ছাড়পত্র না মেলায় বাড়িতেও ঢুকতে পারছেন না তারা।

জানা যায়, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের বাউল এলাকার বাসিন্দা নিবাস কর্মকার। সে তার প্রতিবন্ধী স্ত্রী জ্যোৎস্না কর্মকারকে নিয়ে শ্রমিকের কাজে পাঞ্জাবে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি দেশজুড়ে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তেই ট্রেন ধরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। কলকাতায় নামার পর তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেও তেমন কোনও লক্ষণ মেলেনি। তারপরে তারা বাড়ি ফিরলেও তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না প্রতিবেশীরা বলে অভিযোগ। হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিশেষ ছাড়পত্র পেলেই তাদের বাড়িতে ঢুকতে দেবে প্রতিবেশীরা, এমনটাও দাবি করেছেন ওই দম্পতি। আর যার কারণে শনিবার বিকেলে বালুরঘাট হাসপাতালে ছুটে যান তারা। যেখানেই স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়ে দেন সোমবারের আগে কোনও রকম পরীক্ষা হবে না। ফলে শনিবার বিকেল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের বাইরে একটি গাছ তলায় বসেই রাত কাটাতে হয়েছে অসহায় ওই দম্পতির। যদিও এদিন বিষয়টি জানার পরই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উদ্যোগ নিয়ে তাদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। অভিযোগ, এমনই অবস্থার শিকার হচ্ছেন বালুরঘাট সহ তপন, হিলি, গঙ্গারামপুর সহ অন্যান্য ব্লকের ভিন রাজ্য ফেরত হাজার হাজার বাসিন্দারাও। নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়ে জরুরি নম্বরে ফোন করেও মিলছে না কোন সাড়া বলেও অভিযোগ।

নিবাস কর্মকার জানিয়েছেন, পাঞ্জাবে শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন। তবে মাঝ পথে ফিরে আসায় ঠিকাদার তাদের টাকা পয়সাও দেননি। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সারারাত হাসপাতালের বাইরে গাছ তলায় কাটাতে হয়েছে।

তপনের বানিয়ালের বাসিন্দা মানিক রবিদাস জানিয়েছেন, তারা ৭ জন মিলে বাইরে কাজে গিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা আতঙ্কে তাদের ফিরে আসতে হয়েছে। হাসপাতালের ছাড়পত্র ছাড়া গ্রামবাসীরা তাদের বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেন না। হাসপাতালে গেলেও তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চরম সমস্যায় পড়েছেন প্রত্যেকেই।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে জানিয়েছেন, ওই দম্পতিকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনও প্রয়োজন নেই। বাড়িতে ১৪ দিনের নজরদারির মধ্যে জ্বর সর্দি, কাশি হলে এলাকার আশা ও স্বাস্থ্য কর্মীরা রয়েছে তারা তৎক্ষনাৎ তাদের হাসপাতালে ভর্তি করাবার ব্যবস্থা করবেন। পরিস্থিতি বুঝে তারা ব্যবস্থাও নেবেন। অযথা সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। তবে সোমবার থেকে জেলার বিভিন্ন প্রবেশ দ্বারে মেডিকেল টিম রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোনও শ্রমিককে তাদের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দিলে পুলিশকে জানালেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে পুলিশ প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *