বিরাটিতে তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনার তদন্তে এলেন ব্যারাকপুরের সিপি মনোজ ভার্মা, ঘটনাস্থল ঘুরে গেলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য

প্রতীতি ঘোষ, ব্যারাকপুর, ২২ জুলাই: ২১ জুলাইয়ের রাতে বিরাটিতে তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনার তদন্তের গতি প্রকৃতি খতিয়ে দেখতে ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। এরপর দুপুরে বিরাটির ওই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে যান রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

বুধবার রাতে বিরাটির বণিক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন তৃণমূল কর্মী শুভ্রজিত দত্ত (৩৮)। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বাইকে করে এসে তৃণমূল কর্মীর মাথায় ও বুকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। গুলি চালানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে নিমতা থানার পুলিশ। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় ব্যারাকপুর ও বিধান নগর পুলিশ কমিশনারেট পুলিশ বাহিনীও। রক্তাক্ত অবস্থায় তৃণমূল কর্মীকে উদ্ধার করে উত্তর দমদম পুরসভার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।

আজ ঘটনাস্থলে আসেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। এদিন তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। তবে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলতে না চাইলেও এই খুনের ঘটনায় কিছু তথ্য এসেছে পুলিশের কাছে, তা তদন্ত করে দেখছে বলে সংবাদ মাধ্যমে তিনি জানান। এদিন তিনি বলেন,”শুভ্রজিৎ ওরফে পিকুন তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। তার শরীরে ৫টি গুলি লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের পর বাদবাকি তথ্য উঠে আসবে। এই ঘটনার সাথে কোনও রাজনৈতিক যোগসূত্র আছে কি না বা ব্যবসায়ীক কোনও শত্রুতার জেরে এই খুন তা তদন্ত করে দেখা
হচ্ছে।”

ইতিমধ্যে ২জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। অন্যদিকে মৃত তৃণমূল কর্মীর পরিবার থেকে বাবুলাল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে। সূত্র মারফত জানা যায়, গতকাল তাকেও মারধর করা হয়। যেই ঘটনায় বাবুলাল নামে ওই দুষ্কৃতীর মাথা ফেটে যায়। বর্তমানে সে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা যাচ্ছে। তবে এই সমস্ত ঘটনা নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে।

ওপর দিকে এদিন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তৃণমূল কর্মী শুভ্রজিত দত্তের খুনের ঘটনার পর এলাকার অন্যান্য তৃণমূল কর্মীদের সাথে দেখা করতে ও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তর দমদম পৌর সভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ঘটনাস্থলে যান মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তৃণমূল কর্মীকে যেখানে মারা হয়েছিল সেই জায়গাটি পরিদর্শন করেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এদিন তিনি তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “এই ঘটনা কখনই কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে নয়। এখানে তৃণমূলের মধ্যে কোন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। এই ঘটনা বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ঘটিয়েছে। যে বাবুলালের নামে অভিযোগ উঠেছে সে আমাদের দলের কেউ না। আমি এর বেশি কিছু বলবো না। পুলিশ তদন্ত করছে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা হবে। এই দুষ্কর্ম দুষ্কৃতীরা করেছে আর তার পেছনে বিজেপির মদত রয়েছে।”

বিজেপির কলকাতা উত্তর শহরতলি জেলা সভাপতি কিশোর কর, তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “তারা তো বলবেই। কিন্তু আমাদের কি সেই ক্ষমতা আছে? ভোটের পর থেকে তো আমাদের সব কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এখনও অনেকে ঘরছাড়। ওরা জিতে ক্ষমতায় এসেছে, এখন নিজেদের মধ্যে তোলাবাজি এবং ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে খনোখুনি করছে।

এই গোটা ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের বক্তব্য, “তৃণমূল কর্মীদের যদি এই ভাবে খুন হতে হয় তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ কি করে বাঁচবো? পুলিশের উচিত এই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *