বাঙালি হিন্দু গণহত্যা, নোয়াখালীর ৭৫ বছর, একাত্তরের ৫০ বছর— বিশেষ প্রদর্শনী

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ২ ডিসেম্বর: নোয়াখালী ও একাত্তরের বাঙালি হিন্দু গণহত্যার প্রথম বৃহত্তম প্রদর্শনীর আয়োজন করছে ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’ নামে একটি গোষ্ঠী। ১১-১২ ডিসেম্বর কলকাতার আইসিসিআর কেন্দ্রের যামিনী রায় আর্ট গ্যালারিতে ৫০টি প্যানেল নিয়ে আয়োজন হবে এটির। উদ্বোধন করবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দু’দিনের সেমিনারে বলবেন প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়, অধ্যাপিকা মধু কিশোর, মানস ঘোষ, ডঃ মোহিত রায়, রন্তিদেব সেনগুপ্ত, জয়দীপ মজুমদার। কেন বাংলাদেশ থেকে চলে আসতে বাধ্য হলেন তা নিয়ে বলবেন কয়েকজন হিন্দু মুক্তিযোদ্ধা।

এ খবর জানিয়ে মোহিত রায় বলেন, “প্রখ্যাত বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ আবুল বরকত লিখেছেন যে ২০৪৬ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ হিন্দু শূন্য হয়ে যাবে। অর্থাৎ নোয়াখালীর বাঙালি হিন্দু গণহত্যার শতবর্ষ পূর্তি হবে হিন্দু শূন্য বাংলাদেশ নির্মাণ করে। একেই এককথায় বলে গণহত্যা বা জেনোসাইড। গণহত্যার আন্তর্জাতিক সংজ্ঞায় শুধু হত্যা নয় একটি বিশেষ জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার সব প্রক্রিয়াই গণহত্যার অঙ্গ।

বাংলায় এই হিন্দু গণহত্যা শুরু হয়েছে সেই ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে বক্তিয়ার খিলজীর আগমন থেকেই। যুদ্ধবাজ সুফীদের, যাদের আমাদের সেকুলার ঐতিহাসিকেরা আধ্যাত্মিক তকমা দিয়ে তাদের কুকর্ম ঢেকে রাখতে চান, বাংলায় স্থাপিত তাদের প্রথম (১২২১) খানকাটির (ধর্মীয় আস্তানা) পরিচয় লেখা শিলালিপির পিছনের দিকে রয়েছে হিন্দু মন্দিরের বিবরণ। অর্থাৎ হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেই তাদের ধর্ম বিস্তারের শুরু, সেই শুরু গণহত্যার, হিন্দু ধর্ম সংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন করার।

নোয়াখালীতে ১৯৪৬ এর পাঁচ হাজার বাঙালি হিন্দুর গণহত্যা, ধর্মান্তর, ধর্ষণ বা ১৯৭১এর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্য ও বাংলাদেশী রাজাকারদের দ্বারা নিহত কয়েক লক্ষ বাঙালি হিন্দু সেই ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শুরু করা গণহত্যার ধারবাহিকতা।

আন্তর্জাতিক স্তরে বাঙালি হিন্দু গণহত্যা কথাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঐতিহাসিক সমাজবিদ কণ্টকিত হিন্দু পশ্চিমবঙ্গেও এরকম কথা বলা একরকমের অপরাধ। ১৯৭১এর বাঙালি গণহত্যা বলে কিছু লেখালেখি আন্তর্জাতিক স্তরে রয়েছে, বাংলাদেশের উদারমনা বুদ্ধিজীবিরাও একে বাঙালি গণহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন। বাঙালি হিন্দু গণহত্যা এই নির্মম সত্যটা তারা বাঙালি / বাংলাদেশী ভাবাবেগে ঢেকে রাখতে চাইছেন।

‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’ একটি চিন্তাগোষ্ঠী যারা বেশ কয়েকবছর ধরে বাঙালি হিন্দুর পরিচয়কে বিনষ্ট করার বিরুদ্ধে বৌদ্ধিক কাজ করে যাচ্ছে। তাদের প্রচেষ্টায় বিফল করা গেছে বঙ্গাধিপতি শশাঙ্ক প্রবর্তিত বঙ্গাব্দকে মোগল শাসক আকবরের নামের সঙ্গে যুক্ত করার ঘৃণ্য সেকুলারি চক্রান্ত। ঠাকুরবাড়ির হিন্দুমেলার আদর্শে আবার প্রতাপাদিত্য উৎসব পালন শুরু হয়েছে, ২০শে জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করে পশ্চিমবঙ্গকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক ভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হিন্দু হোমল্যান্ড হিসাবে।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *