বাংলা চর্চা- ১৪। । প্রাতরাশ, প্রাতর্ভ্রমণ

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ১৩ মে: মর্নিং ওয়াক হয়েছে? ব্রেকফাস্ট করেছেন? এরকম বলতে বলতে, লিখতে লিখতে নতুন প্রজন্মের কাছে বড্ড ঝাপসা হয়ে গিয়েছে বাংলা প্রতিশব্দগুলো। প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রবীনরা ভুলে না গেলেও অনেকে হোঁচট খান এর বানান নিয়ে।

আমার প্রশ্নের উত্তরে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন উপ বার্তা সম্পাদক শম্ভু সেন জানিয়েছেন, “প্রাতঃরাশ নয়, প্রাতরাশ। আর প্রাতভ্রমণ, প্রাতঃভ্রমণ – দু’টোই ভুল, কোনোটাই হয় না। সঠিক হল প্রাতর্ভ্রমণ। এ বার ব্যাখ্যা করি।

বিসর্গ দু’ প্রকার – (১) র-কার জাত, যেমন অন্তঃ, প্রাতঃ, পুনঃ, নিঃ, দুঃ, স্বঃ প্রভৃতি। (২) স-কার জাত, যেমন তপঃ, মনঃ, পয়ঃ, শিরঃ, মেদঃ, বয়ঃ, বখঃ, সদ্যঃ, স্রতঃ ইত্যাদি।
তা হলে দেখতে পাচ্ছি প্রাতঃ হল র-কার জাত বিসর্গ।
র-কার জাত বিসর্গের সন্ধির নিয়ম –
যদি স্বরবর্ণ, বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ অথবা য, র, ল, ব, হ পরে থাকে তা হলে র-কার জাত বিসর্গের স্থানে র-কার হয়। যেমন, প্রাতঃ + ভ্রমণ = প্রাতর্ভ্রমণ (বিসর্গের পরে আছে ‘ভ’, বর্গের চতুর্থ বর্ণ); প্রাতঃ + আশ = প্রাতরাশ (বিসর্গের পরে আছে ‘আ’, স্বরবর্ণ)।

একটা অন্য উদাহরণ দিই। শব্দটা হল পুনরুদ্ধার, সন্ধিটা কী? পুনঃ + উদ্ধার। এখানে পুনঃ র-কার জাত বিসর্গ আর উদ্ধার-এর ‘উ’ স্বরবর্ণ। তাই সন্ধি হলে বিসর্গের স্থানে র-কার হল।

এই নিয়ম প্রাতঃকৃত্য, প্রাতঃকাল ইত্যাদির ক্ষেত্রে খাটে না। প্রাতঃ + কাল = প্রাতঃকাল; প্রাতঃ + কৃত্য = প্রাতঃকৃত্য। এখানে দেখুন বিসর্গের পরে আছে ‘ক’। ‘ক’ স্বরবর্ণ নয়, বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণও নয়, য, র, ল, ব, হ-ও নয়। তাই সন্ধির পরে বিসর্গ বিসর্গই থাকল, র-কার হল না। আশা করি বোঝাতে পারলাম।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *