অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ২৬ মে: ছোটবেলার দীঘা, চীন—হ্রস্ব ই হয়ে গেছে। বিভ্রান্তি সূচি/সূচী, আগামি/আগামী, শহীদ/শহিদ, হীরক/ হিরক— এ রকম বেশ কিছু বানান নিয়ে। মাঝে মাঝে ভিন্ন বানান দেখি। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন উপ বার্তা সম্পাদক শম্ভু সেনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এগুলো কী হওয়া উচিত?
শম্ভুদা জানান, “শুধু দীঘা, চীন কেন, ছোটোবেলার অনেক কিছুই তো ই-কার হয়ে গিয়েছে – বাড়ী, মাসী, পিসী, কাকীমা, জেঠীমা, বাঙালী – আরও কত শব্দ! এর যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ আছে।
যে উদাহরণগুলো রয়েছে সেগুলির সঠিক বানান হল সূচি, শহিদ, আগামী, হীরক।
বাংলাভাষায় ই-কার ও ঈ-কারের প্রয়োগ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ভাষা তো স্থবির নয়, সব সময়েই গ্রহণ, বর্জন, সংশোধনের প্রক্রিয়া চলে। যে শব্দগুলো অবিকৃত অবস্থায় সংস্কৃত থেকে বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে যোগ হয়েছে, সেগুলো তৎসম শব্দ। তৎসম মানে তার সমান। এখানে তার বলতে কী বোঝাচ্ছে? তার বলতে সংস্কৃতকে বোঝাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হল, কোথায় ই-কার হবে আর কোথায় ঈ-কার হবে? এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা যায়। কিন্তু সংক্ষেপে বলি, অ-তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ই-কার হবে। আগামী, হীরক এগুলো তৎসম শব্দ তথা সংস্কৃত শব্দ। তাই ঈ-কার হবে। কিন্তু হীরক থেকে হবে ‘হিরে’ বা ‘হিরা’, কারণ ‘হিরে’ বা ‘হিরা’ তো আর তৎসম শব্দ নয়। তাই ‘হিরে’, ‘হিরা’ ই-কার। ঠিক সে ভাবেই গৃহিণী – তৎসম শব্দ। তা থেকে গিন্নি – অ-তৎসম শব্দ।
সূচি, শহিদ, বাড়ি, মাসি, পিসি, কাকিমা, জেঠিমা, বাঙালি – সব অ-তৎসম শব্দ। তাই ই-কার।
আর ‘দিঘা’, ‘চিন’ – এগুলোও যে সংস্কৃত তথা তৎসম শব্দ নয়, তা আমরা ভালোই জানি। সুতরাং দীঘা, চীন নয়; দিঘা, চিন।
বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে কখনোই ঈ-কার হবে না, সে যতই তার বানানে ‘ee’ থাকুক। যেমন Leeds (ইংল্যান্ডের শহর), আমরা লিখব লিডস্।
এখানে একটা কথা মনে করিয়ে দিই। যদি কোনো বিদেশি বা অ-তৎসম শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ঈয় প্রত্যয় যোগ হয়, তা হলে ঈ-কার হবে। যেমন অস্ট্রেলিয়া থেকে অস্ট্রেলীয়, আলজিরিয়া থেকে আলজিরীয়, এশিয়া থেকে এশীয় ইত্যাদি।”