অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ১ জুলাই: অক্ষর, শুদ্ধ বানান ও ভাষা চর্চা গ্রুপে ‘বানানের টিপস্’-এ স্বপন ভট্টাচার্য লিখেছেন, “ইদানীং লক্ষ্য করেছি আমরা অনেক সময়ই ‘দায়ি’ বা ‘দায়ী’ কোনটা লিখব তা বুঝে উঠতে পারি না।
এই ‘দায়ী’ শব্দের একটি অর্থ দায়ক বা প্রদানকারী। যেমন: জীবনদায়ী, কষ্টদায়ী, আনন্দদায়ী ইত্যাদি। আর একটি অর্থ দায় আছে যার (দায়+ইন্)। যেমন: এই কাজের জন্য আমি দায়ী নই। প্রথম অর্থে ‘দায়ী’ শব্দটি ব্যবহারের সময় আমরা সাধারণত ভুল বানান লিখি না। কিন্তু আমাদের বেশি ভুল হয় দ্বিতীয় অর্থে এই শব্দের ব্যবহারে।
আমরা এই শব্দের ভুল বানান লিখি কেন? সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী ‘ইন্’ প্রত্যয় যোগ হলে অ-কারান্ত শব্দের শেষে দীর্ঘ ঈ হয়। যেমন: মান+ইন্ = মানী, জ্ঞান+ইন্ = জ্ঞানী, দায়+ইন্ = দায়ী ইত্যাদি। কিন্তু এই শব্দের সঙ্গে ‘ত্ব’ এবং আরও কয়েকটি প্রত্যয় যোগ হলে শব্দশেষের দীর্ঘ ঈ, হ্রস্ব ই হয়ে যায়। যেমন: মন্ত্রী+ত্ব = মন্ত্রিত্ব, ঠিক তেমনি দায়ী+ত্ব = দায়িত্ব। আর এই শব্দটা আমাদের মাথায় থাকে বলেই আমরা লিখে ফেলি ‘দায়ি’। আবার এর উল্টোটাও হয়। দায়ী শব্দের সঙ্গে ‘ত্ব’ জুড়ে আমরা অনেক সময় ‘দায়ীত্ব’ লিখে ফেলি।
তবে মনে রাখতে হবে যে ঈ-কারান্ত সব শব্দই কিন্তু ‘ইন্’ প্রত্যয়ান্ত শব্দ নয়। তাই সেগুলোর সঙ্গে অন্য শব্দের সমাস হলেও সেই ঈ-কার বদলে ই-কার হয়ে যাবে না। যেমন: স্বামী (স্ব+আ+মিন্) + ত্ব = স্বামীত্ব অথবা সুধী (সু+ধী) + জন = সুধীজন।
এছাড়াও মনে রাখতে হবে যে দায়ক অর্থে দায়ী শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গ করলে হয়ে যাবে দায়িনী। যেমন: আনন্দদায়ী থেকে আনন্দদায়িনী। সুতরাং আমরা লিখব ‘দায়ী’, ‘দায়িত্ব’, ‘জীবনদায়ী’, ‘জীবনদায়িনী’, স্বামীত্ব, সুধীজন।
***