আমাদের ভারত, ঝাড়্গ্রাম, ১৪ জুন: রবিবার ঝাড়গ্রাম জেলার দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিকল্পনার প্রশংসার পাশাপাশি রাজ্যের অনুন্নয়ন প্রসঙ্গে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করলেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি ভারতী ঘোষ। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তাগুলি প্রচার করার এবং এলাকার সমস্যাগুলি তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই রাজ্য সাংগঠনিক জেলাগুলিতে সাংবাদিক সম্মেলন করা হচ্ছে।
ভারতী ঘোষ বলেন, কয়েকদিন আগে দেশকে আত্মনির্ভরশীল এবং শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আমাদের একশ তিরিশ কোটি মানুষ যাতে বিদেশি দ্রব্য বর্জন করে স্বদেশী দ্রব্য কেনেন এবং স্বদেশী দ্রব্য উৎপাদনে সহযোগিতা করে স্বনির্ভর ভারত গড়ে তুলে বিশ্ব সভায় শ্রেষ্ঠ আসনে দেশকে বসাতে পারেন সেজন্য এই লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তাবাহী চিঠি এক কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে রাজ্য বিজেপি। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে বাংলায় প্রথম ভার্চুয়াল সভা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি রাজ্য সামলাতে পারছেন না, কেন্দ্র রাজ্যের দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসন চালাক। এর উত্তরে ভার্চুয়াল সভায় অমিত শাহ বলেছেন, একটা নির্বাচিত সরকারকে তো অগণতান্ত্রিকভাবে ফেলে দেওয়া যায় না, তবে সামনের ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সেই ইচ্ছা বিজেপি অবশ্যই পূরণ করবে এবং উন্নয়নের জন্য সমস্ত রকম প্রকল্প রূপায়ণ করবে।
ভারতী ঘোষ বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধ মত এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি কৃষকদের তালিকাটি পাঠিয়ে দিতেন তাহলে কৃষকরা ছয় হাজার টাকা করে পেয়ে যেতেন। ভারতী ঘোষ বলেন, এ রাজ্যে বিজেপি আসার সঙ্গে সঙ্গে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করে দেবে। যা চালু করলে সাধারণ মানুষ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। ভার্চুয়াল সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্র এই সরকারকে চার লক্ষ আটচল্লিশ হাজার দুশো চৌদ্দ কোটি টাকা দিয়েছে। সেই টাকা কোন কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তা কেন্দ্রকে জানানো উচিত বলে বিজেপি মনে করে।
ভারতী ঘোষ বলেন, এ রাজ্যে দুর্নীতি এখন ডাল-ভাত হয়ে গেছে। বেলপাহাড়ি লালগড়ের মত আদিবাসী অধ্যুষিত অনুন্নত এলাকায় গীতাঞ্জলি প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তপশিলি উপজাতি শংসাপত্রের অভাবে কৃষি পেনশন, জয় জোহার প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না আদিবাসীরা। এরকম বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে আদিবাসীদের। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন তখন তিনি আদিবাসীদের জন্য নয় শত স্কুল তৈরি করে আঠারোশো অলচিকি শিক্ষক নিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ন’বছর ক্ষমতায় থাকার পরও স্কুল এবং শিক্ষকের জন্য আদিবাসীদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হচ্ছে। ভারতী ঘোষ অভিযোগ করেন, আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য ট্রাইবেল অ্যাডভাইজারি বোর্ড গঠন করা হয়েছে কিন্তু এখানে আদিবাসী সমাজের মাথা মাঝি বাবাদের জায়গা নেই। আদিবাসীদের অভাব-অভিযোগ অবস্থান তারা জানাতে পারছেন না। রাজ্য সরকারের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ নিয়েও কটাক্ষ করে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এরকম উন্নয়ন পর্ষদের একটি ফিক্সড সিডিউল রয়েছে। এ রাজ্যে সেসবের বালাই নেই। ফলে অনুন্নত এলাকার মানুষ আজও বঞ্চিত রয়েছেন।
ভারতী ঘোষ বলেন, তৃণমূল সরকার পেশিশক্তি দিয়ে রাজ কায়েম করার জন্য প্রাক্তন মাওবাদীদের দলে নিয়ে আসছে। পেশী শক্তি দিয়ে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ রাজ্যে একশজন বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে বিজেপিকে দমানো যায়নি। এখন মাওবাদীদের আর এ রাজ্যের মানুষ সহ্যও করবেন না। ভারতী ঘোষ ছাড়াও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমরম এবং জেলা সভাপতি সুখময় সৎপতি।