জৈব পদ্ধতিতে ফল চাষে উৎসাহ দিচ্ছে বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

মিলন খামারিয়া
আমাদের ভারত, কল্যাণী, ১৭ সেপ্টেম্বর: মৃত্তিকা জননীর অকৃপণ স্তন্যরসে প্রতিপালিত ভৌমকৃষির সামূহিক সম্ভার হল জৈব ফসল বা অর্গানিক ক্রপ। এটিই হল প্রকৃত অর্থে ‘ধরণীর নজরানা’, যার দানে ভরে ওঠে দেবী অন্নপূর্ণার ভান্ডার; দেবী শাকম্ভরীর রকমারী শাকসবজি। এই খাদ্য ভান্ডার গড়তে ‘খোদার উপর খোদকারি’-র দরকার নেই।মাটির প্রাকৃতিক খাদ্য ভান্ডারকে ব্যবহার করে যে ফসল উৎপাদিত হয় তাই প্রাকৃতিক শস্য। নির্মল বসুন্ধরার যা নিয়ত আশীর্বাদ, তারই খাদ্য-সংস্কৃতি হচ্ছে অর্গানিক ফুড। স্বচ্ছ ভারত যদি গড়তে হয় তবে কৃষিক্ষেত্রকে বিষমুক্ত করতে হবে আর এই যুদ্ধ কোনও রাজনৈতিক লড়াই নয়, বাঁচবার লড়াই। সেই প্রচেষ্টাকেই এগিয়ে দিতে পরিত্রাতায় ভূমিকা নিচ্ছে বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আজ ‘জৈব পদ্ধতিতে ফলচাষ’ বিষয়ক এক দিনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এদিনের কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর দিলীপ কুমার মিশ্র, প্রফেসর কল্যাণ চক্রবর্তী ও প্রফেসর ফটিক কুমার বাউরি।

কার্যক্রমের শুরুতেই জৈব পদ্ধতিতে ফল চাষের গুরুত্ব উপলব্ধি করান ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। অর্গানিক কৃষিপণ্য চাষ করতে হবে পরিবেশ রক্ষার জন্য এবং সপরিবারে-সবান্ধবে বাঁচতে ও বাঁচাতে। আমরা দৈনিক খাদ্য গ্রহণ করি কেবল পেট ভরাতে নয়, কেবল পুষ্টি লাভ করতেও নয়, নীরোগ থাকতে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থেকে সাত্বিক জীবন লাভ করতে।রাসায়নিক কৃষি অনুসরণ করে সেই পরিবেশবান্ধব জীবনচর্চা সম্ভব নয়।

এদিন কৃষকদের বিভিন্ন প্রকারের কলমের চারা তৈরি শেখানো হয়। কাটা-কলম, গুটিকলম, জোড়কলম কীভাবে দিতে হয় তা হাতে-কলমে শেখান ড.চক্রবর্তী। বাগানের বর্জ্য, গৃহের তরকারির খোসা, মাছের কাঁটা, মাংসের হাড় ইত্যাদি ব্যবহার করে বাগানেই কীভাবে বানিয়ে নেওয়া যায় কম্পোস্ট সার, সে-বিষয়ে জানান ড.বাউরি।

আজকের কার্যক্রম বিষয়ে ড. মিশ্র জানান, “রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার অতিরিক্ত মাত্রায় দেওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রকারের মারণ রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে; যেমন মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার,বশিশুদের লিউকোমিয়া, বয়স্কদের রক্ত ও স্নায়বিক ব্যাধি; চর্মরোগ, টিউমার ইত্যাদি। ধরিত্রী হয়ে উঠছে বন্ধ্যা, বিভিন্ন প্রাণীদের মৃত্যু হচ্ছে। এই সার্বিক সমস্যা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ‘জৈব পদ্ধতিতে চাষ’। আমাদের সবার উচিত জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে খাবারকে বিষমুক্ত করা তাতেই বিভিন্ন প্রকারের রোগের হাত থেকে রক্ষা পাব আমরা।”

এদিনের প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কৃষি সম্প্রসারক ও সমাজকর্মী অনিল চন্দ্র রায়। তিনি জানান, “জৈব পদ্ধতিতে ফল ও সবজি চাষ করতে সারা দেশজুড়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। মানুষের সচেতনতার মাধ্যমেই কৃষিকাজকে বিষমুক্ত করা সম্ভব আর তা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।”

ড. বাউরি বলেন, “খাদ্য সংকট মেটাতে ষাটের দশকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। দেশের ভান্ডার কৃষকভাইরা ভরে দিয়েছেন। খাদ্য সংকট মিটলেও এখন ‘খাদ্যে বিষের সংকট’ দেখা দিয়েছে। সকাল বেলায় বাজারে গিয়ে থলে ভরে সবাই বিষ যুক্ত ফল-সবজি কিনে আনছি। অল্প পরিমান বিষ প্রতিনিয়ত খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে দেখা দিচ্ছে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ। বিষের অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য আমাদের দেশের ফল-সবজি উন্নত রাষ্ট্রগুলো ক্রয় করে না। রপ্তানি না হওয়ায় উৎপাদিত অতিরিক্ত ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পরিকাঠামোর অভাবে। তাতেই কৃষকদের দুর্দশা বাড়ছে দিনদিন।

ট্রেনিং শেষে সবাইকে আম, কলা, মৌসুম্বী, সবেদা ও ড্রাগন ফলের চারা ও উপকরণ কিট দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *