লাদাখে চীনা সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শহিদ আলিপুরদুয়ারের সেনা জওয়ান বিপুল রায়

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ১৭ জুন: আগ্রাসনকারী চীনা সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমে লাদাখে শহিদ হল আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা সেনা জওয়ান বিপুল রায়(৩৬)। শহিদ সেনার মৃত্যুতে বুধবার সকাল থেকেই শোকের ছায়া নামে আলিপুরদুয়ারে। শহিদ সেনা কর্মীর বাড়িতে কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হন।

আলিপুরদুয়ার জেলা সদর থেকে মাত্র ১০কিমি দূরে আলিপুরদুয়ার ২নম্বর ব্লকের টটপাড়া এলাকার বিন্দিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিপুল ২০০৩ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ৮ বছর আগে স্থানীয় ভাটিবাড়ির রুম্পার সাথে তার বিয়ে হয়। এক ভাই বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ নিয়ে ভূটানে থাকেন। এদিকে মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনীর তরফে বাড়িতে খবর আসার পরই শোকে পাথর হয়ে যায় বাবা-মা সহ আত্মীয়-স্বজনরা। এদিন গ্রামে যান বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী, জেলা পরিষদের মেন্টর মোহন শর্মা, জেলা বিজেপি সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা সহ একাধিক নেতৃত্ব।গ্রামে শহিদের বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া মানুষের ক্ষোভ এতটাই ছিল যে তারা রীতিমতো স্লোগান দিয়ে দাবি তোলেন চীনা পণ্য বয়কটের। দাবি ওঠে যোগ্য জবাব দিতে হবে চীনকে।

বিপুল রায়ের সম্পর্কে জামাইবাবু তরণীকান্ত রায় বলেন,”সেনাবাহিনীর তরফে মঙ্গলবার রাতেই আমরা তার শহিদ হবার খবর পাই। আমরা জানতে পেরেছি লাদাখ থেকে দিল্লিতে আসবে মরদেহ, সেখান থেকে আলিপুরদুয়ারে আসবে।” এদিকে, ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন বিপুল রায়ের বাবা পেশায় কৃষক নিরেন রায়ও গৃহবধূ মা কুসুমবালা রায়।

পরিবারের তরফে জানা গেছে, শহিদ জওয়ানের স্ত্রী রুম্পা রায় এবং ৫ বছরের একমাত্র শিশু কন্যা তামান্না বর্তমানে মিরাট সেনা ক্যান্টনমেন্টে রয়েছেন। পরিবারের তরফে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ বার আলিপুরদুয়ারে এসেছিলেন বিপুল। লকডাউন পার হলেই তার বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল বলে জানান তার বাবা। নিরেন রায় বাকরুদ্ধ, তবুও বলেন,”আমার ছেলে শহিদের মৃত্যু বরণ করেছে। আমি গর্বিত।”

বিধায়ক সৌরভ বলেন, আলিপুরদুয়ার আর একজন তার বীর সন্তানকে হারাল। শহিদের মৃত্যু কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। আমরা গর্বিত বিপুল রায়ের জন্য। সবসময় তার পরিবারের পাশে আছি আমরা।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ২০০৩ সালে ভারতীয় সেনায় যোগদান করা বিপুল বর্তমানে সেনার সিগন্যাল রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন। মাত্র ১মাস আগেই লাদাখে কাজে যোগ দিয়েছেন। সোমবার মাঝরাতের পর আগ্রাসনকারি চীনা সেনাদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিলেন। শুধু তিনি নন তার সঙ্গে আরও ১৯ জন মিলিয়ে মোট ২০জন সেনার মৃত্যু হয়। লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে চীনা সেনাদের আর কড়া জবাব দেবার দাবি এদিন সকাল থেকেই উঠে এসেছে।

আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের মেন্টর মোহনবাবু বলেন, আলিপুরদুয়ার বীর সৈনিকদের জন্ম দেয়। আমরা কালচিনিতে দেখেছি। আজ বিন্দিপাড়ায় দেখলাম।শহিদের বাবা হবার সৌভাগ্য সবার হয় না। বিপুল রায়ের পিতা নিরেন রায়ের সঙ্গে দেখা করেছি। তার গ্রামে একটি রাস্তার নামকরণ বিপুল রায়ের নামে করা হবে।একটি শহিদ বেদি স্থাপন করা হবে।”

জেলা বিজেপি সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা জানান, “আমরা সবসময় শহিদদের আলাদা মর্যাদা দিয়ে এসেছি।আমরা সবসময় এই পরিবারের পাশে থাকব।আমরা দেশবাসী তথা জেলাবাসীর কাছে আবেদন রাখছি আপনারা যথাসম্ভব চীনা দ্রব্য বয়কট করে চীনকে যোগ্য জবাব দিন।” একদিকে চীন বিরোধী ক্ষোভ অন্যদিকে শোকের ছায়ায় আপাত শান্ত বিন্দিপাড়া গ্রামে জোর জল্পনা চলেছে বুধবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *