বীরভূমের বাঘকে সিবিআই খাঁচায় পুরেছে, এবার দিল্লিবাসীদের দেখানোর জন্য নিয়ে যাবে: দিলীপ ঘোষ

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ২৪ ডিসেম্বর: “দুয়ারে রেশন বাংলার মানুষ চায়নি। দিদিমণির নিজের মনগড়া। ৫০ শতাংশ মানুষ রেশন পাচ্ছে না।রাজ্যের অসহযোগিতায় কেন্দ্রীয় বহু প্রকল্প আটকে। তৃণমূল সরকারের জামানায় পশ্চিমবঙ্গে সিমি, জামাত, আল কায়দা, গ্যাংস্টার সব পাওয়া যায়। শুধু উন্নয়ন পাওয়া যাবে না।’ শনিবার  দুর্গাপুরে চায়ে পে চর্চা কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে এভাবেই তোপ দাগলেন সাংসদ তথা বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। একই সঙ্গে বীরভূমের বাঘকে সিবিআই খাঁচায় পুরেছে, এবার দিল্লীবাসীকে দেখানোর জন্য নিয়ে যাবে বলে খোঁচা দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপুর পুরসভার ভোট। মেয়াদকাল উত্তীর্ণ হওয়ায় প্রশাসক বসানো হয়েছে শিল্পশহরের পুরসভায়। তার ওপর আগামী বছরই রাজ্যে ত্রীস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর ওই দুই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ময়দানে নেমেছে বঙ্গ গেরুয়া শিবির। সংগঠনকে মজবুত করতে যেমন দফায় দফায় ব্লক থেকে জেলা কার্যকারিনী বৈঠক করছে। তেমনই নীচুতলার কর্মীদের অক্সিজেন জোগাতে এবং জনসম্পর্ক বাড়াতে পাড়ায় পাড়ায় চা-পে চর্চা কখনো লিট্টি চোখার আসর করছে বিজেপি নেতৃত্ব।

রবিবার ২৫ ডিসেম্বর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপায়ীর জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনটি বিজেপি সুশাসন দিবস হিসাবে পালন করে। এইদিন দুর্গাপুরে একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন সাংসদ তথা বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার আগের দিন অর্থাৎ শনিবার দিল্লি থেকে সটান দুর্গাপুরে পৌঁছান তিনি। এদিন দুর্গাপুর মায়াবাজারে চা- চক্রে যোগ দেন তিনি। সেখানে বক্তব্যে আগাগোড়া রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমন করেন। তিনি বলেন, “মাত্র আধ পার্সেন ভোট বেশি পেয়ে সরকার গড়েছে। বছর ঘুরতেই হাড় কঙ্কাল বেরিয়ে গেছে। টাকা নেই টাকা নেই বলে চেঁচাচ্ছে। অথচ পশ্চিম বাংলায় কেন্দ্রের অনুদান বেশি আসে। সেই টাকা তৃণমূল নেতারা লুট করে। আয়লা আমফানের টাকা লুট করেছে। আয়লা বিদ্ধস্ত গ্রামের রাস্তায় যাওয়া যায় না। অথচ সেখানের তৃণমূল নেতার পেল্লায় বাড়ি। গরিব মানুষ ক্ষতিপূরণ পায়নি। তৃণমূল নেতারা সেই টাকা লুট করেছে।” রাজ্যের অসহযোগিতার কারণে কেন্দ্রের কোনো প্রকল্পের কাজ হচ্ছে না। রেলের বহু পরিকাঠামোর কাজ আটকে। তার লম্বা তালিকা আছে। আয়ুষ্মান কার্ড চালু করতে দেয়নি। তিন বছরেও কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পে চাষিদের নথি পাঠাতে পারেনি। ৭২ শতাংশ চাষির মধ্যে ৪২ শতাংশ চাষি সেই সুবিধা পাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন,” রাজ্য পুলিশের কোনো কাজ নেই। ভোট করাতে গিয়ে চুরি, ডাকাতি, খুন দেখার সময় নেই। পাড়ায় পাড়ায় বোমা বন্দুক পাওয়া যাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদী, গ্যাংস্টার পাওয়া যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “এই সরকারের জামানায় পশ্চিমবঙ্গে সিমি, জামাত, আল কায়দা পাওয়া যায়। পাঞ্জাবের গ্যাংস্টার, নাগাল্যান্ডের সন্ত্রাসবাদী পাওয়া যায়। শুধু উন্নয়ন পাওয়া যাবে না।”

এদিন তিনি রাজ্যের দুয়ারের সরকার নিয়ে কড়া তোপ দাগেন। তিনি বলেন, “দুয়ারে রেশন বাংলার মানুষ চায়নি। দিদিমণির নিজের মনগড়া। সপ্তাহে নির্দিষ্ট দোকানে রেশন দেওয়া হত। মানুষ সেখানে কার্ড নিয়ে গিয়ে রেশন তুলত। এখন কবে কখন পাড়ায় দুয়ারে রেশন দিতে আসছে জানতে পারছে না। সেদিন হয়তো গরিব মানুষ যদি কাজে যায়, সে রেশন পাচ্ছে না। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ রেশন পাচ্ছে না।” অনুব্রত মন্ডলকে নিশানা করে কড়া আক্রমণ করেন দিলীপ ঘোষ। অনুব্রত মন্ডলকে বীরভূমে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, “স্বাদ বদল করার জন্য নিয়ে গেছে। অনেকদিন বাড়ির মাছ ভাত খায়নি। তাই নিয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন,” অনুব্রত মন্ডলের হাতে তৃণমূলের প্রাণ। ভাগের টাকা কে কত পেত, সেসব যদি বলে দেয় তাহলে তৃণমূল দলটা উঠে যাবে। সেই জন্য ওকে বাঁচাতে কৌশল করছে তৃণমূল সরকার। তবে কিছুদিন আইন থেকে বাঁচা যায়। চিরদিন যায় না।” 

তিনি আরও খোঁচা দিয়ে বলেন” বীরভূমের বাঘ বলে তৃণমূল নেতারা। বাঘ তো খাঁচায় থাকে। এখানে প্রভাবিত করে। তাই সিবিআই ওই বাঘকে রাস্তায় না হাঁটিয়ে খাঁচায় পুরেছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখেছে খাঁচাবন্দি বাঘকে। এবার দিল্লিবাসীদেকে দেখানোর জন্য নিয়ে যাবে।” এদিন তিনি তৃণমূলকে আরও কড়া ভাষায় আক্রমন করে বলেন,” তৃণমূল নেতা মানেই কয়লা চোর, বালি চোর, গরু চোর। না হলে মাটি চোর তো হবেই। আমরা কোথাও গেলে মানুষ ফুল ছোড়ে। আর তৃণমূলের ওই বাঘ আসানসোলে আসত। মানুষ চোর চোর বলে স্বাগত জানাতো। মানুষের মধ্যে এত রাগ যে, মানুষ পা’য়ের ছেঁড়া জুতোটাকে ছুড়ে মারে।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *