
চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ১৮ মার্চ: সব ভারতীয় ভাষাই দেবনাগরী হরফে লেখা হোক। রাজ্যসভায় এই প্রস্তাব পেশ করেছেন শিবপ্রতাপ শুক্লা নামে এক বিজেপি সাংসদ। প্রতিবাদে সরব হল ‘ঐক্য বাংলা’ সংগঠন। বিজেপির এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে ‘ঐক্য বাংলা’ সংগঠনের সদস্যরা শ্যামবাজারে এক পথসভা করেন। সেখানে তাঁরা অভিযোগ করেন, বিজেপি সাংসদের ওই প্রস্তাবের পিছনে আসলে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের গোপন অভিসন্ধি রয়েছে।
ঠিক কী বলেছিলেন শিবপ্রতাপ? সোমবার ১৬ মার্চ রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ভারতের প্রতিটি অংশের মানুষ হিন্দি বোঝে। তাই ২২টি সরকারি ভাষাই দেবনাগরী (হিন্দি) হরফে লেখা উচিত। এর পাশাপাশি, ওই বিজেপি সাংসদ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দাবিও জানান।
বিজেপি সাংসদ এই দাবি জানালেও ২০১১ সালের ভাষাগণনা অনুযায়ী, দেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ অহিন্দিভাষী। সেই সূত্র ধরে ‘ঐক্য বাংলা’র নেতা বীরেশ্বর দাশগুপ্ত সভায় দাবি তোলেন, শিবপ্রতাপকে শাস্তি দিতে হবে। কারণ, জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে এই দাবি পেশের মাধ্যমে অপমান করেছেন। ‘ঐক্য বাংলা’র অন্যতম নেতা কাওসার হক মন্ডলের বক্তব্য, শুধু সংস্কৃত নয়। বাংলা এসেছে প্রাকৃত ভাষা মাগধি থেকেও। তাই বিজেপি সাংসদের এই প্রস্তাব, হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘৃণ্য চক্রান্তের একটা অঙ্গ। কাওসার আশাবাদী, বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাগরণের ফলে, হিন্দি রাষ্ট্রভাষা- এই ভুল বাঙালির অনেকটাই ভেঙেছে।
‘ঐক্য বাংলা’র নেতা দেবায়ন সিংহ বলেন, ‘সরকারি তথ্য অনুসারে বাঙালির জন্মহার ১.৬ শতাংশ। সেখানে হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলোতে সেটা ৩-এর কাছাকাছি। তাহলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কোথায় দরকার? ধর্মের টনিক দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, মুসলমানদের জন্যই জনসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু, বাংলার মুসলিম জন্মহার ২.২ শতাংশ। আর উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, ঝাড়খণ্ডের হিন্দু জন্মহার ২.৫ শতাংশর ওপরে। সেখানে মুসলিম জন্মহার ২.৯-এর ওপর। তাহলে জন্মহার কাদের সমস্যা?’
এই প্রসঙ্গে ‘ঐক্য বাংলা’র অন্যতম নেতা রেশমি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘উত্তর ভারতীয় হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি বাঙালিকে ভাগ করতে চাইছে। কিন্তু, ঐক্য বাংলা নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের প্রতিজ্ঞা – বাঙালিকে আমরা ভাগ করতে দেব না।’ কেরলে বাঙালি নিগ্রহ থেকে বিজেপি সাংসদের এই উক্তি – ভারতজুড়ে বাঙালি বিরোধিতার সংখ্যা বাড়ছে। সকলকে এর প্রতিবাদে সামিল হতে আহ্বান জানান ‘ঐক্য বাংলা’ নেতৃত্ব।