শহিদবেদি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা বগটুইয়ে! আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢুকতে বাধা, বিজেপির মঞ্চে হাজির শহিদদের পরিবার

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ২১ মার্চ: বছর ঘুরতেই ফের শিরোনামে বগটুই গ্রাম। তবে এবার খুন পাল্টা খুনে নয়, সরগরম শহিদবেদি নিয়ে রাজনীতিতে। এমনকি রামপুরহাটের বিধায়ক, ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে মৃতদের বাড়িতে ঢুকতেও বাধা দেন পরিবারের সদস্যরা। শাসক দলের শহিদ মঞ্চে স্বজনহারা পরিবারগুলি যেতে প্রথমে অনীহা প্রকাশ করলেও বিজেপির শহিদ মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন স্বজনহারা পরিবারগুলি। তাতেই উৎসাহিত হয়ে নিহতদের পাশাপাশি তাদের পরিবারকেও প্রণাম নিবেদন করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

গত বছরের ২১ মার্চ রাতে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় তৃণমূল পরিচালিত বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ভাদু শেখকে। খুনের বদলা নিতে ওই রাতেই
১২টি বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে ১০ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ ওঠে ভাদুর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার তিনদিন পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রেফতার হন তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেন। তিনি এখন বিচারাধীন বন্দি। নারকীয় ঘটনার তদন্ত হাতে নিয়ে জাল গুটিয়ে ফেলে সিবিআই। এরই মধ্যে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর সিবিআই হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় হত্যালীলার মূল অভিযুক্ত লালন শেখের।

নিহতদের স্মরণ করতে মাসখানেক আগেই গ্রামে শহিদবেদি তৈরির কথা ঘোষণা করেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিক নিহতদের পরিবারকে পাশে পেতে দিন তিনেক আগে পাল্টা বেদি তৈরি করে তৃণমূল। ফলে দুই শহিদবেদিতে ফুল মালা দেওয়ার রাজনীতিতে সরগরম হয় বগটুই গ্রাম।

এদিন বেলা ১১ টায় তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতির নেতৃত্বে গ্রামে পৌঁছন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী, বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, অশোক চট্টোপাধ্যায়, দলের কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ। তারা স্বজনহারা শেখলাল শেখের বাড়িতে ঢুকতে গেলে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢুকতে বাধা দেন শেখলাল। তিনি বলেন, “ঘটনার পর থেকে স্থানীয় বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। কোনো দিন খোঁজখবর নেননি। আজ রাজনীতি করতে এসেছেন। তাই তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ব্লক সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি সর্বদা আমাদের পাশে আছেন”। এদিন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে ঢোকায় মহিলারা জল দিয়ে বাড়ির উঠোন ধুয়ে দিল।

শেখলালের ছেলে কিরণ শেখ বলেন, “স্থানীয় বিধায়ক জঘন্য কাজ করেছে। ধৃত আনারুল হোসেনকে অনুব্রত মণ্ডল সরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সরাতে দেননি। বগটুই কাণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক যুক্ত আছেন বলে আমার বিশ্বাস। আজ রাজনীতি করতে এসেছেন”।

আশিসবাবু বলেন, “কে কি বলেছে শুনিনি। তবে আমি ফিরহাদ হাকিম এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এসেছিলাম। পরে সিবিআই তদন্তকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠতে পারে ভেবে আসিনি। তবে খোঁজ নিয়েছি”।

তৃণমূলের মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিরোধীরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে এসেছে। গ্রামের মানুষকে মোটা টাকা দিয়ে ভুল বুঝিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। আর ডেপুটি স্পিকার বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফলে সব সময় গ্রামে আসতে পারেন না”। মিহিলাল শেখ সম্পর্কে তিনি বলেন, “উনার কি অবস্থান বুঝতে পারছি না। ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আমরা গ্রামের মানুষের মতামত নিয়েই বেদি তৈরি করেছি। এখানে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা এসেছিলেন। আমরা ওদের পাশে আছি”।

বিকেলে গ্রামে পৌঁছন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “আমরা ভোট চাইতে আসিনি। এখানে মানবিকতা লঙ্ঘন হয়েছে। যে সংখ্যালঘু মুসলমানরা মমতাকে দল বেঁধে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন তাদের উপরেই আজ অত্যাচার চলছে। ওরা এখানে নকল বেদি বানিয়েছে। আমরা অনেক আগেই বেদি তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলাম”। শুভেন্দু আরও বলেন, “আজ যেমন শোকের দিন তেমনি আনন্দেরও দিন। কারণ আজ অনুব্রত মণ্ডল তিহার জেলের জল খেতে গিয়েছে”।

এদিন বিকেলে বগটুই গ্রাম থেকে মৌন মিছিল করে বামফ্রন্ট। উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়। মিছিল শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “দুই দলই শহিদ হয়ে যাবে। তাই শহিদবেদি তৈরিতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে”। এরপরেই রাজ্য সরকারের দুর্নীতি নিয়ে আক্রমাতক হয়ে তিনি বলেন। তৃণমূল দলের সবাই চোর, পঞ্চায়েত সদস্য থেকে নবান্ন। এখন রাজ্যে পিসি ভাইপোর কোম্পানি চলছে। যেটা মুকুল রায়রা তৈরি করে গিয়েছিল। এরা একশো দিনের কাজের টাকা চুরি করেছে। তাই কেন্দ্র টাকা পাঠানো বন্ধ করেছে। মমতা যে ধর্ণার হুমকি দিয়েছেন সেটা নাটক। রাজ্য সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জানাক কেন্দ্র কত টাকা দিয়েছে। কত টাকা খরচ হয়েছে। কত টাকা দুর্নীতি হয়েছে। একইভাবে কেন্দ্র সরকারের উচিত শ্বেতপত্র প্রকাশ করা”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *