বেহাল রাস্তা, স্কুলে যেতে পারে না ছেলে মেয়েরা, স্বাধীনতার ৭১ বছরেও উন্নয়ন পৌছায়নি বটুনের দেবক গ্রামে

আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ২০ জুন: ডিজিটাল যুগে এগোনোর কথা বলা হলেও গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন যে আজও সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ যেন তারই এক অন্যতম উদাহরণ। স্বাধীনতার ৭১ বছর পরেও পাকা রাস্তা মেলেনি গ্রামের মানুষদের। কোথাও এক হাঁটু কাদা তো আবার কোথাও জল। বেহাল রাস্তার জেরে অধিকাংশ দিনই স্কুল যেতে পারে না সেই গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। শুধু তাই নয়, কেউ অসুস্থ হলে ঘাড়ে করে নিয়ে আসা ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই এলাকায়। বাম থেকে তৃণমূল বা বিজেপি, সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের তরফে মিলেছে হাজারো প্রতিশ্রুতি কিন্তু আজো ঠিক হয়নি গ্রামবাসীদের একমাত্র চলাচলের বেহাল রাস্তা। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু জল কাদায় ডুবে থাকা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে নাভিশ্বাস অবস্থা আট থেকে আশি সকলেরই। যে ঘটনার প্রতিবাদেই কাঁচা রাস্তায় ধানের চারা রোপন করে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামের পুরুষ-মহিলারা। শনিবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের বটুন গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবক গ্রামের এমন ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় বিধায়ক থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত প্রধান, মেম্বার কেউই ওই রাস্তা তৈরিতে কোনও উদ্যোগই গ্রহণ করেননি। যার কারণে প্রতি বছর বর্ষায় চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দেবক গ্রামে প্রায় এক হাজার লোকের বসবাস। ওই গ্রাম থেকে প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পার করেই প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে যেতে হয় বাসিন্দাদের। খরার মরশুমে কোনও রকমে যাতায়াত সম্ভব হলেও বর্ষার শুরু থেকেই চরম সমস্যায় পড়েন গ্রামবাসীরা। প্রায় এক হাঁটু জল কাদা পার করে প্রতিদিন স্কুলে যেতে চরম বিপাকে পড়েন ছাত্র-ছাত্রীরা। গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে স্কুলের জন্য বাড়ির পুরুষ মানুষদের সাইকেল ঘাড়ে করে এক কিমি রাস্তা পার করে দিতে হয় ছেলে মেয়েদের জন্য। শুধু তাই নয়, অসুস্থ রোগীদের হাসপাতাল নিয়ে যেতে বা প্রসূতি মহিলাদের চিকিৎসা সবক্ষেত্রেই দুর্দশার সীমা থাকে না দেবক গ্রামে। রাস্তার কারণে বর্ষার প্রায় ছমাস অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারেই যেতে পারে না গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। আর যার কারণে একপ্রকার বাধ্য হয়েই অভিভাবক অভিভাবিকাদের খাবার আনতে ছুটতে হয় সেন্টারেও। এমন সব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েই এদিন ওই কাঁচা রাস্তায় ধানের চারা রোপন করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা।

গ্রামবাসী রাফিজা খাতুন, হোসনেয়ারা বিবি, মুস্তকেমা খাতুনরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পরেও প্রাথমিক উন্নয়নের ছোঁয়া টুকুও পড়েনি তাদের গ্রামে। ফলে প্রতি বছর কাঁচা রাস্তায় চলাফেরা করতে দুর্দশার সীমা থাকে না বাসিন্দাদের। রাস্তার জন্য স্কুলে যেতে পারে না ছেলে মেয়েরা। তৃণমূল বিজেপি কোনও দলই গ্রামের উন্নয়নে কাজ করেনি। নেতাদের বহু প্রতিশ্রুতি মিললেও কোনও কাজ হয়নি। এমন সব ঘটনার প্রতিবাদে এদিন তারা রাস্তায় ধানের চারা রোপন করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

প্রাক্তন শিক্ষক অজয় ঘোষ জানিয়েছেন, তৃণমূলের বিধায়ক থেকে শুরু করে স্থানীয় মেম্বার উন্নয়নের নূন্যতম কাজ না করায় ওই গ্রামে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে।

বিজেপির প্রধান প্রশান্ত চৌধুরী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তা কাঁচা থাকা সত্যিই খারাপ বিষয়। তবে অত বড় রাস্তা পঞ্চায়েতের পক্ষে করা সম্ভব নয়। বিধায়ক বিষয়টি দেখে গিয়েছেন। দ্রুত কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন গ্রামবাসীদের।

তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য পলাশ বর্মন বলেন, বিধায়ক তহবিলের বরাদ্দকৃত অর্থেই কাজ শুরু হবে। বর্ষার জন্য কাজ চালু করা যাচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে কুমারগঞ্জ বিডিওকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *