বিজয়া পর্বের মাঝেই ঢাকায় ধামরাই পরিবারে লক্ষ্মীপুজোর ব্যস্ততা

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ৭ অক্টোবর: দেবী বিসর্জনের পর বিজয়া পর্বের মধ্যেই ঢাকায় ধামরাই পরিবারে লক্ষ্মীপুজোর ব্যস্ততা শুরু হয়ে গিয়েছে। চলছে তার প্রস্তুতি।

অবিভক্ত বাংলায় খাঁটি কাঁসার বিখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন এই ধামরাই পরিবার। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে পরিবারের সর্বজ্যোষ্ঠ তারারাণী বনিক (৬৮) থেকে সর্বকনিষ্ঠ ৫ বছরের মেয়ে ব্যস্ত সকলেই। পূর্ণদ্যমে চলছে অতিথি আপ্যায়ন। গৃহকর্তা সুকান্ত ধামরাই এই প্রতিবেদককে জানান, ”আমাদের বাড়িতে বর্তমানে আমি, আমার মা, আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকি। মূলত মা সমস্ত আয়োজন করে তবে আশেপাশের লোকজনও বেশ সাহায্য করেন। দুর্গাপুজো থেকে লক্ষ্মীপুজো চলে ব্যস্ততা।

২৭ কক্ষ বিশিষ্ট ১২০ বছর পুরোনো এই বাড়িতে আনুমানিক ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই পূজোপর্ব। সুদৃশ্য বাড়িটি প্রায় ১৫ কাঠা জমির উপর। সুকান্তবাবু এ কথা জানিয়ে বলেন, “আগে বাড়ির পাশে রাস্তার উপর পালা করে পাশাপাশি আমাদের তিনটি বনিক বাড়ি যথা আমার ঠাকুরদা সর্ব্ব মোহন বনিক, পাশের বাড়ির যদুনাথ বনিক এবং আর এক প্রতিবেশী ধীরেন বনিক তিন বাড়ি মিলে পূজা করত। পরে নানা সমস্যার কারনে আমরা পূজাটা বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসি।

নিশ্চিতভাবেই অন্তত আমার ঠাকুর্দার আমল থেকেই এই পূজা চলে আসছে। স্বাধীনতার পর আমার বাবা ফনি ভূষণ বনিক ও আমাদের পাশের বাড়ির পার্শ্ব নাথ বনিক এই পূজার আয়োজন করতেন। তবে গত প্রায় ১২ বছর ধরে এই পূজা শুধু আমাদের বাড়িতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগে যখন মাটির প্রতিমা ছিল তখন বিভিন্ন প্রতিমা শিল্পী ও পুরোহিত এই পূজার আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।”

দেবী দুর্গার প্রতিমা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে সুকান্তবাবু এই প্রতিবেদককে জানান, “গত পাঁচ বছর ধরে আমরা আমাদের নিজের কারখানায় তৈরি একটি অষ্টধাতুর দুর্গা প্রতিমা দিয়ে পূজো করে আসছি। উচ্চতায় প্রতিমাটি ৮ ফুটের চাইতেও একটু বড়। এর ওজন ৫২০ কেজি। আমাদের কারখানার সবাই মিলে এটি তৈরি করেছি। পারিবারিক পুজোর বাজেট নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, “সব মিলিয়ে প্রায় ১,৫০,০০০ টাকার মত খরচ হয়। পুরোটাই আমিই করি যেহেতু আমাদের তেমন কোনও শরিক এদেশে নাই। তবে এর জন্য কোনও পৃথক তহবিল নাই।

বেণীমাধব শীল এবং লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়। পঞ্চমীর ঘট বসানোর মাধ্যমে পূজার শুরু হয়। কখনও কোনও বলি হত না। পঞ্চমীর দিন থেকে আমরা নিরামিষ খাই। দশমীর দিন সকালে দর্পন বিসর্জন হওয়ার পর নিয়ম ভঙ্গ করা হয়। যেহেতু অষ্টধাতুর প্রতিমা তাই নদীতে বিসর্জন হয় না। দুর্গা পুজোর পর লক্ষী পূজা, কালী পূজা, সরস্বতী পূজা, গণেশ পূজা হয়, শনি পূজা, বস্তি পূজা হয়।

এই পৌরসভায় এ বছর ৪১ মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিকাংশ বারোয়ারী তবে বেশ কিছু পারিবারিক পূজাও হয়। তারাও ব্যস্ত বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় ও লক্ষীপুজোর ব্যস্ততা নিয়ে।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *