আমাদের ভারত, কলকাতা, ৩০ মার্চ: ভারত ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করার আহ্বাণ জানানো হল এক অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার রাতে একটি পাঁচতারা হোটেলের অনুষ্ঠানে এই আবেদন রাখেন কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এবং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সুব্রত গুপ্ত।
আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, “এই আনন্দের সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্থপতি, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ভোররাতে আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব জাতিকে আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গেছে। আমি ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ বীরাঙ্গনা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তাঁরা আমাদের সার্বভৌম পরিচয়ের প্রতীক লাল ও সবুজের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। আমি গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি আমাদের বিদেশী বন্ধুদের যাঁরা আমাদের মুক্তির লক্ষ্যে তাদের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা প্রসারিত করেছিলেন। ভারতের জনগণ এবং সরকার, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কঠিন সময়ে আমাদের অপ্রতিরোধ্য সমর্থন দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।
বিগত ৫২ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তরমূলক পরিবর্তন এবং আর্থ-সামাজিক অর্জনগুলি নিয়ে গর্বের সাথে কথা বলার কারণ রয়েছে। ফিনিক্সের মতো ছাই থেকে উঠে বাংলাদেশ গত পাঁচ দশকে কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। জাতির জনকের কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে স্থায়ী উন্নয়নের ঈর্ষণীয় পথে যাত্রা করছে। বিশ্বব্যাপী একটি ‘বিস্ময়কর উন্নয়ন’ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, সর্বজনীন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সব ধরনের চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এর বৈশ্বিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করেছে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ক্ষেত্রে।“
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সুব্রত গুপ্ত বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে এপার বাংলার মানুষের একটা বড় অংশের আবেগের একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। আমার পূর্বপুরুষ থাকতেন পূর্ব পাকিস্থানে। দেশ ভাগের আগেই, ১৯৪৬-এ আমার বাবা চলে আসেন। ভারত-বাংলাদেশের সীমারেখা ৪ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি। এ দেশের ৫টি রাজ্যে ছড়িয়ে। সীমান্তে অনেকটা অংশে রয়েছে জল। গত বছর ভারত-বাংলাদেশ বানিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ বিলিয়ন ডলারের ওপর। পরিমাণটা ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যণীয়।
সুব্রতবাবু বলেন, পূর্বপুরুষদের অনেক স্মৃতি রয়েছে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানকে ঘিরে। দুই বাংলার অনেক মিল। বিশেষ করে ভাষা, সংস্কৃতি, সিনেমা, কবিতা, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে। কিছু অসুবিধার একটি হল সন্ত্রাসবাদ। দু’দেশের সমঝোতার মাধ্যমে অনেকটাই সমাধানসূত্র মিলেছে। আরও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে আমরা সকলেই তার সুফল পাব।
অনুষ্ঠানে প্রথমে ভারতের ও তার পরে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পেল্লাই কেক কেটে বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করা হয়। বিশিষ্ট আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন প্রবীন শিক্ষাবিদ তথা প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ পবিত্র সরকার, উপাচার্য ডঃ সুরঞ্জন দাস, উদ্যোগপতি সত্যম রায়চৌধুরী ও নয়নতারা পালচৌধুরী, ক্যালকাটা বুক সেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের দুই কর্মকর্তা সুধাংশুশেখর দে ও ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা প্রেস ক্লাবের দুই কর্মকর্তা স্নেহাশিস সুর ও কিংশুক প্রামাণিক, গায়ক রূপঙ্কর বাগচি, বিভিন্ন দূতাবাস ও বণিকসভার পদস্থ আধিকারিক এবং সাংবাদিক-সহ বিভিন্ন পেশার কিছু আমন্ত্রিত।