২০২৪ এর নির্বাচনে কি জোট সমীকরণ বদলাতে পারে? রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কি সেই ইঙ্গিত দিল?

শুভাশীষ ব্যানার্জী,
Founder, P3
কূটনৈতিক উপদেষ্টা
আমাদের ভারত, কলকাতা, ২১ জুলাই: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্রৌপদী মুর্মু যে ব্যবধানে যশবন্ত সিনহাকে পরাজিত করেছেন, তা NDA-এর ভবিষ্যতের নিরিখে অত্যন্ত সুবর্ণ ইঙ্গিত। আমার বিশ্বাস, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে NDA-এর ফলাফল এতটাই একপেশে হবে যে দু’টো কক্ষেই NDA অত্যন্ত শক্তিশালী জোট হিসেবে নিজেদের পুনরায় স্থাপিত করবে। এই ফলাফল শুধুমাত্র সরকারী নীতিগত দিক থেকে NDA- এর সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করবে তাই নয়, উপরন্তু আগামী দিনে বহু সাহসী সিদ্ধান্ত তাদের নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।

ভোট কাউন্ট এর নিরিখে বলতে গেলে যদি শুধুমাত্র NDA শরিকরা NDA পদপ্রার্থীর সমর্থনে ভোট করতো, তাহলে কোনোদিনই ব্যবধান এত বড় হয় না। ব্যবধানের মূল্যায়ণ করলে বোঝা যায়, UPA -এর বহু শরিক গোপনে ভোট দিয়ে বা ভোট প্রক্রিয়া থেকে বিরত থেকে NDA-কে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করেছে। এটি একটি সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত যে আগামী দিনে UPA ভেঙে বহু অন্যান্য দল ও অনেক ছোটো আঞ্চলিক দল NDA- এতে যোগ দিতে পারে।

সেক্ষেত্রে মমতার দাবি কতটা গুরুত্ব পাবে?

আপাত পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় স্তরে যে ২৩ টি আসন রয়েছে, সেই ক’টি বাদ দিয়ে গোটা ভারতবর্ষে নির্দিষ্টভাবে ২০২৪-এ ময়দানে নেমে বিজেপির বিরোধিতা করতে ক’জন সঠিকভাবে ওনার পাশে দাঁড়াবে, সেটা বলার জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে গেলো, তা বলা যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জাতীয় কংগ্রেসের সাথে কোনো না কোনো সমীকরণ অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে।

যদি আমরা জাতীয় প্রেক্ষাপটে আসনের বিশ্লেষণ করি, তাহলে এখনও জাতীয় কংগ্রেস বিরোধীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। দক্ষিণ ভারতের দলগুলির থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খোলাখুলি সমর্থন পাওয়ার আশা অত্যন্ত ক্ষীণ। সেক্ষেত্রে মধ্য ভারতে সমাজবাদী পার্টি ব্যতীত এখনও কোনো দল জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এমনকি, যদি পশ্চিমবঙ্গে ৪২ এর মধ্যে ৪২ টি সিট তৃণমূল জেতে, তাহলেও বর্তমান NDA সরকারের পতন ঘটাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝুলিতে আরও অন্তত ১৫০-টি আসন চাই। এই ১৫০-টি আসন নিয়ে বৃহত্তর জোট তৈরী হওয়ার সময় এবং সুযোগ প্রতিদিন ক্ষীণ হয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে সকলে যদি এককভাবে লড়ে, তাহলে পরোক্ষভাবে তা NDA এর ফিরে আসার পথকেই সাহায্য করবে।

অতএব ২০২৪-কে মাথায় রেখে জাতীয় স্তরে মনঃসংযোগ না করে রাজ্যে সম্পূর্ণভাবে ৪২-এর মধ্যে ৪২ টি সিট পাওয়ার লক্ষ্যে অঙ্ক কষাই হওয়া উচিৎ তৃণমূলের মূল লক্ষ্য। এখনও অবধি যে প্রেক্ষাপট প্রকাশ পেয়েছে, তার নিরিখে জাতীয় স্তরে NDA সিটের সামান্য তারতম্য হলেও সরকার বদলের কোনো রকম ইঙ্গিত তো দূরের কথা, আরও শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত এই রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন আমাদের দেখায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *