ভোট-পরবর্তী হিংসা তদন্তে তৎপর সিবিআই, ৪০ নতুন এফআইআর, গ্রেফতার ১৮

রাজেন রায়, কলকাতা, ২৪ সেপ্টেম্বর: ২০২১ বিধানসভা ভোটে তৃতীয়বারের জন্য বিপুল ভাবে জিতে আসার পরেও শাসকদল তৃণমূলের ঘোরতর অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা। হাইকোর্টে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার পর ১৯ আগস্ট নজিরবিহীন রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্ট। খুন, ধর্ষণ থেকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মত ঘটনাগুলির তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআই গোয়েন্দাদের হাতে। সেই মত রাজ্যকে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চল এবং কলকাতা ৪টি জোনে ভাগ করে বাছাই করা ১০৯ জন সদস্যকে নিয়ে জেলায় জেলায় তদন্তে নেমে পড়ে সিবিআই টিম। যে তদন্ত জারি এখনও। কিন্তু কতটা এগোল সিবিআই তদন্ত?

প্রথমেই ২৭ আগস্ট সিবিআই আধিকারিকরা যান কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে ভোট-পরবর্তী মামলায় নিহত অভিজিৎ সরকার এবং উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় জন্মপ্রকাশ যাদবের বাড়িতে। ২৭ আগস্ট দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিজেপি নেতা সৌরভ বর এবং ২৮ আগস্ট শ্যামনগরে শোভারানি মণ্ডল ও বীরভূমের কাঁকড়লায় মিঠুন বাগদির বাড়িতে যায় সিবিআই। আর এভাবেই ২৯ আগস্ট নরেন্দ্রপুরে নিহত বিজেপি নেতা নির্মল মণ্ডল এবং পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে বলরাম মাঝির বাড়ি, ৩০ আগস্ট কোচবিহারের চিলাখানা থেকে তৃণমূল কর্মী শাইনুর রহমানের বাড়ি, ৬১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি ও পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে দুই নির্যাতিতার বাড়িতেও যান গোয়েন্দারা। তারা হাজির হন ২ সেপ্টেম্বর সোনারপুরের বিজেপি কর্মী হারান অধিকারী, ৩ সেপ্টেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে দেবব্রত মাইতি, ৮ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের রাজু সামন্তের বাড়ি এবং ১৪ সেপ্টেম্বর বীরভূমের গোপালনগরে নিহত বিজেপি কর্মী গৌরব সরকারের বাড়িতেও। ২৩ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট পশ্চিমে নিহত বিজেপি নেতা মানস সাহার বাড়িতে এবং শুক্রবার মালদহের মানিকচকে মালদার মানিকচক ডোম হাট এলাকায় নির্যাতিতার বাড়িতে যান সিবিআইয়ের প্রতিনিধি দল।

শুধু জেলায় জেলায় পরিদর্শনই নয়, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় একাধিক জনকে গ্রেফতারও করেছেন সিবিআই গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রের খবর, ভোট পরবর্তী হিংসার বিভিন্ন মামলায় এখনও পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া এখনও পর্যন্ত ৪০ টি নতুন এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই এই মামলায় জমা পড়েছে ৪টি চার্জশিট। ২ সেপ্টেম্বর বীরভূমের মনোজ জয়সওয়ালের মৃত্যু মামলায় ২ সেপ্টেম্বর প্রথম চার্জশিট, ৩ সেপ্টেম্বর ভাটপাড়ার জয়প্রকাশ যাদবের মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় চার্জশিট এবং বীরভূমের কাঁকড়তলার মিঠুন বাগদির মৃত্যু মামলায় ১০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় চার্জশিট জমা পড়ে। নদিয়ার কোতোয়ালিতে পলাশ মণ্ডলের মৃত্যুর ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর জমা পড়ে চতুর্থ চার্জশিট। ভবিষ্যতে এভাবেই প্রয়োজনে আরও একাধিক এফআইআর, গ্রেফতার এবং আরও একাধিক মামলায় চার্জশিট জমা করতে পারেন সিবিআই গোয়েন্দারা, এমনটাই সূত্রের খবর। যাতে সুবিচার পায় ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত পরিবারগুলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *