রাজেন রায়, কলকাতা, ২৩ সেপ্টেম্বর: সীমান্তে গরুপাচার রোখার মূল দায়িত্ব বিএসএফের থাকলেও সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকার কারণে পাচার দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে, এমন অভিযোগ উঠছিল অনেকদিন ধরেই। নিজস্ব আধিকারিকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রভাবে যে বিএসএফ তদন্ত করবে না, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। সেই কারণেই এবার এই দিকে নজর দিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। গরুপাচারের মামলায় কলকাতা, সল্টলেক -সহ রাজ্যের ১৬টি জায়গায় গরুপাচারের মামলায় তল্লাশি চালাল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। যার মধ্যে রয়েছে ২ বিএসএফ কমান্ড্যান্ট-সহ গরু পাচার সিন্ডিকেট প্রধানরাও।
মালদহ ও মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি-সহ লালগোলা, রঘুনাথগঞ্জ, শিলিগুড়ি, কামদুনি, রাজারহাট, কলকাতার তপসিয়া, সল্টলেক-সহ বহু এলাকায় এদিন তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে হিসাব বহির্ভূত নগদ প্রায় ৪৭ লাখ টাকা-সহ গ্রেফতার করা হয়েছিল বিএসএফ কমান্ডান্ট জিবু ডি ম্যাথিউ-কে। তাঁকে জেরা করে জানা যায়, মুর্শিদাবাদে কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্তে গরুপাচারে সহায়তা করার জন্য ওই বিশাল অঙ্কের টাকা তিনি পেয়েছিলেন। সরকারি ভাবে আরেক বিএসএফ কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমার তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৪৮ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। যদিও তা আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বলে দাবি সিবিআইয়ের। এমনকি ওই মামলায় কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ী এনামূল হক ওরফে বিশু নামে গরু পাচারকারী সিন্ডিকেটের প্রধানকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সে পরে জামিন পেলেও তাকে জেরা করেও এই পাচার চক্রের একাধিক খোঁজ পায় সিবিআই।
কলকাতায় সল্টলেকের সিটি সেন্টার টু-এর পাশে এক বিএসএফের কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমারের বাড়িতেও এই ঘটনার মূল তল্লাশি চালানো হয়। সতীশকুমার এখন কর্নাটকে পোস্টেড হলেও তিনিও এক সময় মালদহে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কর্মরত ছিলেন, সে সময়েই গরু পাচারের বিভিন্ন চক্রকে তিনি সাহায্য করেছিলেন বলে সিবিআই মনে করছে। তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তল্লাশির পর বিএসএফ কর্তার বাড়ি সিল করে দিয়েছে সিবিআই।
সতীশ ছাড়াও এ দিন ফের বেনিয়াপুকুরে এনামূল হকের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটেও হানা দেন সিবিআই আধিকারিকরা। এ দিন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা মুর্শিদাবাদে লালগোলার কুলগাছিয়ায় এনামূলের গ্রামেও হানা দেন। রাজারহাট নিউটাউনে একটি ফ্ল্যাটেও হানা দেন তারা। সিবিআই আধিকারিকদের দাবি, এই চক্রের সঙ্গে পদস্থ সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে রাজ্যের শাসকদলের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদেরও যোগ রয়েছে। খুব শীঘ্রই চার্জশিট পেশ করে তাদের নাম প্রকাশ্যে আনতে চলেছেন তারা, এমনটাই দাবি সিবিআই গোয়েন্দাদের।