অনুব্রতর বোলপুরের রাইসমিলে সিবিআই হানা

আশিস মণ্ডল, বীরভূম, ১৯ আগস্ট: বোলপুরের রাইসমিলে হানা সিবিআই আধিকারিকদের। বৃষ্টির মধ্যেই এদিন হানা দেন তারা। গাড়ি নিয়ে শুক্রবার সাতসকালেই হাজির হন সিবিআই অফিসাররা। আর রাইসমিলে হানা দিতেই বেরিয়ে পড়ল একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য।

২০১১ সালের আগে  রাইস মিলের মালিক ছিলেন হারাধন মণ্ডল, ২০১১ সালের পর আচমকাই বিক্রি করা হয় অনুব্রতকে, কিন্তু কেন? জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের আগে এই রাইস মিলের মালিক ছিলেন হারাধন মণ্ডল। তাঁর ছেলের অংশিদারিত্ব ছিল। আচমকাই ২০১১ সালের পর গোটা রাইস মিল তিনি বিক্রি করে দেন অনুব্রত মণ্ডলকে। সিবিআই আধিকারিকরা তদন্তে নেমে জানতে পেরেছেন বর্তমানে বোলপুরের ত্রিশূলাপট্টিতে ভোলে বোম রাইস মিলে দুজনের মালিকানা রয়েছে। এক, অনুব্রত মণ্ডলের প্রয়াত স্ত্রী ছবি মন্ডল এবং মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের নামে। তবে রাইস মিলের ডিরেক্টর মেয়ে এবং বাড়ির পরিচারক। সূত্রের খবর, মোট ৪৫ বিঘা জমির উপর তৈরি এই চালকলটি কেনা হয় ২০১১ সালে। আনুমানিক ৫ কোটি টাকা দিয়ে চালকলটি কেনেন অনুব্রত। এও জানা যাচ্ছে, ওই চালকল বিক্রি করতে আগের মালিককে এক প্রকার বাধ্য করা হন। ব্যবসা চালাতে না পেরে বাধ্য হয়েই নাকি কলটি বিক্রি করে দেন তিনি। এই মিলেই বসতেন অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা নিজে। যিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকাও বটে। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলেও এই মিলের নাম লেখা রয়েছে। 

এলাকাবাসীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই জায়গায় আসলে ছিল ২ টি রাইস মিল। তখনও রাইস মিলের মালিকানা ছিল না অনুব্রত মণ্ডলের নামে। পরবর্তীতে অনুব্রত মিল দুটি কিনে নেন। দুটি মিলিয়ে একটি মিল তৈরি করা হয়। মোট ৪৫ বিঘা জমির ওপর ওই মিল রয়েছে বলে সূত্রের খবর। জানা যাচ্ছে, প্রায় ৫ কোটি টাকা দিয়ে পুরনো মালিকদের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল মিলটি। প্রথম মিল বন্ধ হয় দশ মাস আগে। তখন করোনার কারণে কর্মীদের কাছে লোকসান হয়েছে বলে মুখে বলা হলেও। এনামূল গ্রেপ্তারের পর থেকেই নড়বড়ে হয়ে যায় ব্যবসা। আরও জানা গিয়েছে, গত ২ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে মিলের কাজ। কোনও উৎপাদন আপাতত হচ্ছে না সেখানে। কী কারণে বন্ধ মিল, তা স্পষ্ট নয়।

গরুপাচার মামলায় অনুব্রতের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে সিবিআই এই সম্পত্তির হদিস পায়। এর আগে অনুব্রতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হয়েছে। তৃণমূল নেতার সম্পত্তির হদিস পেতে তাঁর ঘনিষ্ঠদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং কাজ-কারবারেও সিবিআই নজর দিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
এদিন তল্লাশিতে গিয়ে বাধা পান সিবিআই আধিকারিকরা। অভিযোগ, তাঁরা এই মিলের ভিতর ঢুকতে গেলে বাধা আসে নিরাপত্তারক্ষীদের তরফে। মিলের গেটে তালা লাগানো ছিল। কিন্তু ডাকাডাকি করলেও প্রথমে কেউ দরজা খুলতে চাননি বলেও অভিযোগ। এক রক্ষী বলেন, ‘‘চাবি নেই।’’ প্রায় ৪০ মিনিট টালবাহানার পর রাইস মিলে ঢোকেন সিবিআই আধিকারিকরা। মিলের ভিতর একাধিক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। মিলে তল্লাশি শুরু করে সিবিআই।
দীর্ঘ টালবাহানার পর বোলপুরের ভোলে বোম রাইস মিলে ঢুকেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, অনুব্রতের স্ত্রী ও কন্যার নামে রয়েছে এই চালকল। সেই চালকলের ভিতরে ঢুকে মিলল দামি দামি গাড়ি। ঝকঝকে সেই সব গাড়িতে আবার সাঁটানো রয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার’ লেখা স্টিকার। রয়েছে পাইলট কারও। কে এই সব গাড়ির মালিক? তাতে সরকারি স্টিকারই বা কেন লাগানো? 
শুক্রবার সকালে ভোলে বোম চালকলে ঢোকে সিবিআইয়ের একটি দল। যদিও প্রথমে তারা বাধা পায়। নিরাপত্তা রক্ষীরা প্রথমে জানান, গেটের নাকি চাবি নেই! প্রায় ৪০ মিনিট পর অবশ্য তাঁরাই তালা খোলেন। চালকলের ভিতরে প্রবেশ করে সিবিআই আধিকারিকদের চোখ যায় একটি জায়গায়। সেখানে সার দিয়ে একের পর এক ঝকঝকে এসইউভি দেখতে পান তাঁরা। ওই গাড়িগুলির মালিক কে, তা জানার চেষ্টা করছেন সিবিআই আধিকারিকরা। পাশাপাশি, নিরাপত্তা রক্ষীরা কেন আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে গেট খোলেননি, সেটাও জানার চেষ্টা করছেন আধিকারিকরা।

সূত্রের খবর, গত দু’মাস ধরে এই চালকলটি বন্ধ রয়েছে। তা সত্ত্বেও এত কর্মী ভিতরে কী করছেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পরে সিবিআই আধিকারিকরা ভোলে বোম রাইস মিল থেকে বেরিয়ে যান।

ভেতরে যে গাড়িগুলি ছিল সেগুলি হল-
১. ফোর্ড এনডেভর ২ টো
এর মধ্যে ১ টা WB 54U 6666
গাড়ির মালিক প্রবীর মণ্ডল।

২. টাটা সুমো গোল্ড-UA 04 7183
মালিকানা ও বিস্তারিত জানা যায়নি।

৩. মাহিন্দ্রা থর
WB 48B 6966
গাড়ির মালিক অর্ক দত্ত।

৪. মাহিন্দ্রা XUV 500
WB 54 Z 4176
গাড়ির মালিক স্বতীর্থ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের। এই ট্রাস্টের গাড়ি কেন ভোলে বোম রাইস মিল রয়েছে এই সম্পর্কে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “ট্রাস্টের গাড়ি, কলকাতা যাওয়ার সময় অনুব্রত মণ্ডল ব্যবহার করেছেন। এই গাড়িতেই লালবাতি লাগানো নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। এই গাড়িটা অনুব্রত মণ্ডল কিনে নিতে চেয়েছিল। তারপর থেকে গাড়িটা মিলেই আছে।” বললেন সতীর্থ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মলয় পীঠ। এমনকি, অনুব্রত মণ্ডল তাঁর অনেক উপকার করেছেন, শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ তৈরির সময়। তাই তিনি মানবিক ভাবে অনুব্রতর পাশে থাকবেন। এমনটাই জানান মলয় পীঠ।

এছাড়াও বহু সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। জানা গিয়েছে, খাতায় কলমে প্রতিটি সম্পত্তি মূলত তিনজনকে দেওয়া হয়েছে। এক  স্ত্রী ছবি মণ্ডল, কন্যা সুকন্যা এবং বিদ্যুৎবরণ গাইনকে। বিদ্যুৎবরণ গাইন মূলত অনুব্রতকে ‘বাবা’ সম্বোধন করে ডাকেন। যিনি ২০১১ সালের আগে এখানে খালাসি ছিলেন, এখন বোলপুর পুরসভার কর্মী। আর এখানেই সন্দেহর বীজ। তার নেপথ্যে মূলধন কার ছিল? জানতেই এদিন বোলপুরের রাইসমিলে অভিযান সিবিআইয়ের প্রতিনিধি দলের। তবে যে দুটি কোম্পানির নামে প্রচুর টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল সেই কোম্পানির কোনো কাগজ মিল থেকে পায়নি সিবিআই আধিকারিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *