আমফান মোকাবিলায় ৭ জেলা শাসকের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী, খোলা হল কন্ট্রোল রুম, তৈরি সমস্ত দফতর

রাজেন রায়, কলকাতা, ১৯ মে: কথায় বলে, করোনা পরিস্থিতি সামলাতে নাজেহাল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে এবার বড় চ্যালেঞ্জ ‘আমফান’ ঘূর্ণিঝড়’। মঙ্গলবার আমফানে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত সাত জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তার ক্যাবিনেট দল। নবান্নে খোলা হল কন্ট্রোল রুম। নবান্নে মুখ্য সচিবের টাস্কফোর্স ছাড়াও বিদ্যুৎ দপ্তর থেকে সমস্ত দপ্তরকে তৈরি থাকতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, আবহবিদদের মতে আয়লার থেকেও ভয়ঙ্কর হতে পারে ঘূর্ণিঝড় আমফান। আয়লার তুলনায় তার গতিবেগ অনেক বেশি। এমনকি স্থলভূমিতে ঢুকেও তার গতিবেগ বিশেষ কিছু কমেনি। তাই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। আমফান মোকাবিলায় মঙ্গলবার সাত জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ইতিমধ্যেই ৩ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে। আমফান মোকাবিলায় মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে গঠিত টাস্ক ফোর্স কাজ করছে। আগামীকাল কাউকেই বেলা ১২টার পর বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে যারা বুধবার সকালে অফিসে আসবেন, তা সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক না কেন, ঘূর্ণিঝড় না মেটা পর্যন্ত তাদেরকে অফিসেই থাকতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আলিপুর আবহাওয়া দফতর বুধবার কলকাতায় সকাল থেকেই জনজীবন পুরোপুরি বন্ধ করার সুপারিশ করেছে।

এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’ইতিমধ্যে উপকূল এলাকা থেকে সকলকে সরিয়ে আনা হয়েছে। কেউ সমুদ্রে যাবেন না, কারণ ঝড়ে দুই ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মেদিনীপুরের একাংশ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থাকবে। মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে কাজ করছে টাস্কফোর্স। পুলিশ প্রশাসনের নিচুতলায় বার্তা দেওয়া হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টারের যতটা সম্ভব সর্তকতা দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে দু’লক্ষ মানুষকে সরানো হয়েছে। তাই অনুরোধ করছি, বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা অবধি পর্যন্ত কেউ বাইরে বের হবেন না। যতক্ষণ না প্রশাসনের তরফ থেকে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ কেউ বাইরে বের হবেন না। উপকূলের এলাকা থেকে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে। এবং তাদেরকে যতটা সম্ভব থাকার জায়গা এবং খাবার দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি জানান, এই ঘূর্ণিঝড় রোধে বুধবার সারারাত নবান্নে থেকেই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন প্রশাসনের কর্তারা। তিনি নিজেও নবান্নে রাত কাটাবেন বলেই খবর। সারাদিনই নবান্ন থেকেই পুরো রাজ্যের পরিস্থিতি সামলাবেন মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব-সহ সকলেই। উল্লেখ্য, এর আগেও বুলবুল, ফণীর মতো পরিস্থিতিতে তিনি উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে সারারাত নবান্নে ছিলেন। ফলে এই ঘটনা নতুন কিছুই নয়, মত প্রশাসনের কর্তাদের।

এর পাশাপাশি এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের যাতে কোনওভাবেই সমস্যা না হয় সেই কারণে হেল্পলাইন নম্বর (০৩৩-২২১৪৩৫২৬) চালু করা হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ শিবির থেকে যাতে কোনওভাবেই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই কারণে আশ্রয়স্থলগুলিতেও মাস্ক, স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই দুর্যোগের মাঝে যাতে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন না চালানো হয় রেলকে সেই অনুরোধও করা হচ্ছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান-এই সাত জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।

এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের পক্ষ থেকে সবরকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে বলেই জানিয়েছেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, রাজ্যের সর্বত্র সব সময়ের জন্য মেন্টেনেন্সের কর্মীরা প্রস্তুত থাকবে। কোভিড ও অন্যান্য হাসপাতালে যাতে বিদ্যুৎ বিপর্যয় না হয় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহের জন্য সকল ডিভিশনেই ট্রান্সফর্মার ও ডিজেল সেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে মন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত বিপর্যয়ে সরাসরি বিদ্যুৎ মন্ত্রীর দফতরে ২টি হেল্পলাইন খোলা হয়েছে। সবরকম সাহায্যের জন্য। যার নম্বর হল ৭৪৪৯৩০০৮৪০ ও ৯৪৩৩৫৬৪১৮৪। এই ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সমস্ত রকম পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত রয়েছে রাজ্য প্রশাসন।

জরুরি অবস্থায় ফোন করা যাবে কলকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ( ০৩৩-২২১৪৩০২৪/ ২২১৪-৩২৩০/ ২২১৪-১৩১০)। প্রয়োজনে মানুষ অভিযোগ জানাতে পারেন ১০০ ডায়াল করেও। এছাড়াও কলকাতার বাসিন্দারা বিশেষ হেল্পলাইন ৯৪৩২৬২৪৩৬৫ নম্বরটিতে ফোন করা ছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ করতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *