জয় লাহা, আমাদের ভারত, দুর্গাপুর, ২০ মে: এ যেন রহস্যময় চিঠি। বেআইনী চোরাচালান ঠেকাতে বিভিন্ন সড়কে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। চলছে ধরপাকড়। অথচ খোদ জাতীয় সড়কের ওপর নজরদারি তলানিতে। জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে পদ্ধতি বদলে যাত্রীবাহী বাসে চলছে অবৈধভাবে কয়লা পাচার। আর তাতেই বেআইনী কয়লা পাচার নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে। তেমনই প্রশ্ন উঠেছে, পরিবহন দফতর ও পুলিশের নজরদারিতে। এমনই ছবি ধরা পড়ল ১৯ নং জাতীয় সড়কের ওপর আসানসোল- বর্ধমান রুটে।
রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ বালি, কয়লা পাচার বন্ধে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। রাস্তার ওপর কড়া নজরদারি। একই সঙ্গে রাস্তার ওপর ওভারলোডিং যানবাহন চলাচল ঠেকাতে শুরু হয়েছে কড়া নাকা চেকিং। ১৯ নং জাতীয় সড়কের প্রায় সব ক’টি থানা এলাকায় একাধিক নাকা চেকিং শুরু হয়েছে। এছাড়ও ওভারলোডিং রুখতে পানাগড়- মোরগ্রাম সড়ক, দুর্গাপুর বাঁকুড়া সড়কেও চলছে কড়া নজরদারি। একই সঙ্গে লরি ডাম্পারে অবৈধ বালি – কয়লা পাচার রুখতে ধরপাকড় শুরু হয়েছে।
খনি অঞ্চল থেকে কয়লা পাচারে এবার যাত্রীবাহী বাসকে ব্যবহার শুরু করল মাফিয়ারা। লোকাল বাসের ভেতর, ডিকিতে, বাসের ছাদে বস্তা ভর্তি করে অবাধে চলছে কয়লা পাচার। তাও আবার ১৯ নং জাতীয় সড়কের আসানসোল-বর্ধমান রুটে। আসানসোল-বর্ধমানগামী বেশ কিছু লোকাল বাসে বস্তা ভর্তি কয়লা চাপানো হচ্ছে। কয়লার বস্তা চাপানোর জন্য বাসের সামনের ও পিছনের কয়েকটা সিট খুলে দেওয়া হয়েছে। আবার কোনো বাসের ছাদে, ডিকিতে, ঠাসা কয়লার বস্তা চাপানো হচ্ছে। ছাদের ওপর কয়লার বস্তা ত্রিপল দিয়ে ঢাকা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বাসের ভেতরের কয়লার বস্তা কাপড় দিয়ে ঢাকা দেওয়া হচ্ছে। আর ওইসব কয়লা বেশিরভাগ চাপানো হয় খনি অঞ্চলের রানীগঞ্জ জেকে নগর, মঙ্গলপুর, অন্ডালের কাজোড়া মোড়সহ বেশ কয়েকটি লোকাল স্টপেজে। আর সেখান থেকে জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে পুলিশের নাকা চেকিংকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বর্ধমানে। সেখানে ছোটো শিল্প কারখানায়, বিভিন্ন হোটেল, খাবারের দোকানে ওইসব কয়লা যাচ্ছে।
বর্ধমান বাস মালিক সমিতির পক্ষে তুষারকান্তি ঘোষ বলেন, “যাত্রীবাহী বাসে এধরনের পন্য চাপানোর আমার বিরেধী। যাত্রীরা যাতে ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারে সে বিষয়টি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো বাস এধরনের বেআইনী কাজ করে সেটা তার ব্যক্তিগত। সংগঠন এসব অনৈতিক কাজ সমর্থন করে না।”
জানা গেছে, জ্বালানিতেলের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। সেভাবে বাস ভাড়া বর্ধিত হয়নি। সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে যাত্রী যেমন কমছে বাসে, তেমনই লোকসানে জর্জরিত বাস মালিকরা। ইতিমধ্যে বহু মালিক তাদের বাস বিক্রি করে দিয়েছে। অনেকে খরচের বহর বেড়ে যাওয়ায় বাস চালানো বন্ধ করেছে। মুনাফার আশায় এভাবে অবৈধভাবে কয়লা ভর্তি বস্তা যাত্রীবাহী বাসে নিয়ে যেতে বাধ্য হয় বাস কর্মচারীরা। প্রশ্ন, যাত্রীবাহী বাসের ভেতর যাত্রীসাছন্দ্যকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কিভাবে বেআইনী পণ্য পরিবহন করছে?
যদিও এবিষয়ে দুর্গাপুর এআরটিও’র পক্ষে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এসিপি প্রবুদ্ধ ব্যানার্জি জানান,
“শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে নজরদারি চলছে। জাতীয় সড়কে কয়েকদিন আগে একটি অবৈধ আয়রন ডাস্ট বোঝাই গাড়ি ধরা পড়েছে।”