বেসরকারি স্কুলের ফি নির্ধারণ সহ একাধিক বিষয় দেখার জন্য কমিশন গঠনের ভাবনা রাজ্য সরকারের

আমাদের ভারত, ৭ জুন: বেসরকারি শিক্ষাক্ষেত্রে একাধিক বিষয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করতে রাজ্য সরকার একটি কমিশন গঠন করতে চায় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেই কমিশনের একাধিক কাজের মধ্যে অন্যতম একটি কাজ হবে বেসরকারি স্কুলের টিউশন ফি নির্ধারণ করা। গুজরাট, মহারাষ্ট্র সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে আইন আছে। এবার সেই পথে পশ্চিমবঙ্গ এগোতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বেসরকারি স্কুলগুলি নিজেদের ইচ্ছেমত যে ফি নির্ধারণ করছে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে এই কমিশনের কাজ। সরকার গঠিত কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে স্কুলকে নিজেদের ফি নির্ধারণ করতে হবে। তবে কিভাবে কমিশন গঠন করা যায়? আদৌ এই বিষয়গুলো চলতি ব্যবস্থায় আছে কিনা, বা এটা আইনত কিনা এই সমস্ত প্রশ্ন উঠবে কমিশন গঠন ঘিরে।

যে বাচ্চারা স্কুলে পড়ে করোনার কারণে তাদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে এই দুই বছরে। তাদের যেমন শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, তেমনি মানসিক সমস্যায় পড়েছে অনেক শিশু। তার অন্যতম কারণ স্কুলের টিউশন ফি মেটানো নিয়ে পরিবারের দুর্দশার চিত্র চোখের সামনে দেখেছে তারা। মহামারী পরিস্থিতিতে উপার্জন কমেছে পরিবারের। অনেকের চাকরিও চলে গেছে। ফলে ছেলে মেয়েদের স্কুলের ফি মেটাতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থার মুখে পড়েছে অভিভাবকরা। অনেক শিশুই বাবা-মায়ের অবমাননা চোখের সামনে দেখেছে। অনেককে স্কুলের অনলাইন ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনেককে রেজাল্ট দেওয়া হয়নি। অফলাইন ক্লাস শুরুর পর তাদের জন্য স্কুলের দরজা বন্ধ থেকেছে শুধুমাত্র টিউশন ফি জমা না করার জন্য। এই সব অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা ওদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে।

আর পাঁচটা ক্ষেত্রের মধ্যে শিক্ষার খরচ নিয়ে জুলুমবাজি প্রকাশ্যে এসেছে‌ এই মহামারী সময়। তবে শুধু যে মহামারীর সময় অসুবিধায় পড়েছে বাবা-মা তা নয়। করোনার আগেও স্কুলে ভর্তির আগে শুধুমাত্র স্কুলের ফি জমা দেওয়ার ক্ষমতা বাবা-মায়ের আছে কিনা হাজার হাজার প্রশ্নের উত্তরের বিনিময়ে সেটা প্রমাণ করতে হয় অভিভাবকদের।

গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থানে বেসরকারি স্কুলের ফি নির্ধারণ সহ নানা বিষয়ে আইনি পথে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ রয়েছে অর্থাৎ এই সব রাজ্যের আইন রয়েছে এর জন্য। এই রাজ্যগুলির মধ্যে কয়েকটিতে জেলাশাসকদের নিয়ে কমিটি আছে। স্কুলগুলিতে ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব জেলা শাসকের কাছে পেশ করতে হয়। জেলাশাসক অভিভাবক সমিতির মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করে দেন।

বেসরকারি স্কুলের ফি নির্ধারণে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে কিনা একাধিক মামলায় আদালত তা স্পষ্ট করেছে। ২০১৭ তে গুজরাট সরকার এই বিষয়ে আইন করেছে। এই আইনকে আটকাতে চল্লিশটি কর্পোরেট স্কুল যৌথভাবে মামলা করেছিল। কিন্তু গুজরাট হাইকোর্ট সেই মামলা খারিজ করে দেয়।

আইন অনুযায়ী শিক্ষার অধিকার সকলের আছে। ক্লাস এইট পর্যন্ত শিক্ষায় কোনওভাবেই বাধা সৃষ্টি করা চলে না। বেসরকারি স্কুলগুলিও এই আইনের মৌলিক উদ্দেশ্য পূরণের বাইরে নয়, অর্থাৎ কোনো আইনেই প্রাইভেট স্কুল ইচ্ছেমতো ফি ধার্য করতে পারে না। কিন্তু আমাদের প্রচলিত ধারণা আছে যা কিছু বেসরকারি তাতে কেউ নাক গলাতে পারবে না।

সরকার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচে লাগাম টানতে কমিশন গঠন করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও সেটা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব কিনা এখন সেটাই দেখার। বেসরকারি স্কুলের ফি নিয়ন্ত্রণের সাথে সেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মানজনক ন্যায্য বেতনের দিকটিও কমিশনের বিচারের মধ্যে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। একইসঙ্গে স্কুলে কর্মরতদের নিরাপত্তা নিয়েও একটি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *