
আশিস মণ্ডল, সাঁইথিয়া, ৬ জুন: “সবাই জামাই আদর চাওয়ায় মুশকিল হয়ে উঠছে। মাছ দিলে কেউ বলছে মাংস দেয়নি। কেউ বলছে ডিম হয়নি”। পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে ময়দানে নেমেছে প্রশান্ত কিশোরের দল। এলাকার বিধায়ক কিংবা নেতারা সাংবাদিক সম্মেলন করে পিকে’র ছাপানো বুলি আওড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনার কথা বলছেন। সেই সময় শনিবার দুপুরে সাঁইথিয়া ব্লক অফিসে বিডিওর সঙ্গে বৈঠক সেরে বাইরে বেরিয়ে সাংসদ শতাব্দী রায়ের মন্তব্য অস্বস্তিতে ফেলেছে শাসক শিবিরকে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে নাস্তানাবুদ রাজ্য সরকার। এরপর একের পর এক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ বিব্রত করেছে সরকারকে। রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের কিষাণ মান্ডিতে নম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ, নলহাটি ১ নম্বর ব্লকের বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠে খাবার না দেওয়ার অভিযোগ, নলহাটি ২ নম্বর ব্লকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখার অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে এই ক্ষোভ নিয়ে ঢালাও প্রচারও হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সামাল দিতে আসরে নামে প্রশান্ত কিশোরের টিম। সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে শতাব্দীর মন্তব্য ঘৃতাহুতি বলে মনে করছেন অনেকে।
শতাব্দী বলেন, “সবাই অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। এতদিন পরে বাইরে থেকে ফিরছে। বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক আপনার বাড়িতে একজন এলে আপনি আত্মীয়তার সম্মান করতে পারবেন। একহাজার হাজার লোক এলে সেই সম্মান করতে পারবেন না। বিক্ষোভ নিজস্ব ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এখন তো বাঁচার লড়াই সুতরাং সেগুলো মানিয়ে নিতে হবে”। তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের এই বিক্ষোভের পিছনে কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদত নেই বলে মনে করেন বীরভূমের সাংসদ।
শতাব্দীর এই মন্তব্যের নিন্দা করেছেন বিজেপির জেলা সহ সভাপতি শুভাশিস চৌধুরী। তিনি বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকরা কেউ জামাই আদর চায়নি। চেয়েছে ন্যূনতম খাবার আর থাকার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ওরাও কারও না কারও জামাই অবশ্যই। তাদের প্রতি সাংসদের এই ব্যাঙ্গ মন্তব্যকে ধিক্কার জানাই”।
এই মন্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সঞ্জয় অধিকারী। তিনি বলেন, “এতবড় বিপর্যয়ে তাঁকে জেলায় দেখা যায়নি। অথচ সব যখন স্বাভাবিকের দিকে তখন শ্রমিকদের প্রতি এই মন্তব্য অপমান জনক। আমরা ওনার সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগের দাবি করছি। মন্তব্যের নিন্দা করছি। শতাব্দীকে শ্রমিকদের কাছে নিঃশর্তে ক্ষমা চাইতে হবে”।
সিপিমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেন, “অনেক সমালোচনার পর রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের আনতে বাধ্য হয়েছে। কোনও শ্রমিককে জামাই আদর করে আনা হয়নি। এই সরকারের যিনি মাথা সেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন শ্রমিকদের ফেরালে হাজার হাজার করোনা রাজ্যে ঢুকবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের যদি এই মানসিকতা হলে তার প্রতিফলন ঘটবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা রয়েছে বিধি মেনে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করতে হবে। স্বাস্থ্য সম্মত খাবার দিতে হবে। এই নির্দেশিকাকে কেউ যদি জামাই আদর বলে ব্যাঙ্গ করেন তা অবাঞ্চিত, অত্যন্ত নিন্দনীয়, অনভিপ্রেত ও অমানবিক। এই মানসিকতা নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে সফল হতে পারে না। এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। তা না হলে আরও বিপর্যয়রে ডেকে আনবে”।