আমাদের ভারত, কলকাতা, ১২ জুলাই: চলে গেলেন হিন্দু নেতা তপন ঘোষ। আজ সন্ধ্যা সাতটা কুড়ি মিনিট নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৮ শে জুন থেকে তিনি কররোনা আক্রান্ত হয়ে মুকুন্দপুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।আজ সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গত ২৮ জুন মুকুন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। করোনার পাশাপাশি তাঁর ফুসফুসে কিছু পুরনো সমস্যা ছিল। মূলত সেই চিকিৎসা চলছিল। গত ৪ তারিখ থেকে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু তাঁর রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম ছিল। হিন্দু সংহতির প্রাক্তন নেতা রাজা দেবনাথ জানান, কাল থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটে এবং রক্তচাপ কমতে থাকে। আজ রাত সাতটা কুড়ি মিনিট নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তপন ঘোষ একসময় আরএসএসের প্রচারক ছিলেন।
আরএসএসের প্রচারক হিসেবে বিদ্যার্থী পরিষদ এর দায়িত্ব সামলেছেন দীর্ঘদিন। সেই সময় তাঁর সহকর্মী তথা বিদ্যার্থী পরিষদের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক অনিরুদ্ধ সাহা জানিয়েছেন, ৮০ এবং ৯০ এর দশকে যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ভাবতেন তাদের মধ্যে তপন ঘোষ হচ্ছেন অন্যতম। তিনি মনে করতেন বামপন্থীদের সরাতে না পারলে এ রাজ্যের উন্নতি হবে না। তিনিই প্রথম মতাদর্শগত ভাবে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছিলেন। তপন ঘোষ বিদ্যার্থী পরিষদের পর বজরঙ্গের দায়িত্বও সামলেছেন।
পরবর্তীকালে কর্মপদ্ধতি নিয়ে আরএসএসের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি হিন্দু সংহতি তৈরি করেন। দেশ-বিদেশে তাঁর ডাক পড়ে। বৃটেনের পার্লামেন্টের তিনি বক্তব্য রেখেছেন। ইজরায়েলের গিয়েছেন। আমেরিকাতে বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। সেখানে বহু অনুরাগী রয়েছে তাঁর। পরবর্তীকালে তিনি হিন্দু সংহতি থেকে সরে আসেন।
বিদ্যার্থী পরিষদের প্রাক্তন রাজ্য নেতা অধ্যাপক পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শোকবর্তায় বলেন, তপন ঘোষ ছিলেন অনন্য প্রতিভাশালী, হিন্দুত্ব এবং হিন্দু রাষ্ট্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ। মৌলানা আজাদ কলেজে পদার্থবিদ্যার কৃতি ছাত্র। জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে জেলে গেছেন। বাড়ির একমাত্র ছেলে ঘর ছেড়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারক হয়েছিলেন। বিদ্যার্থী পরিষদের সংগঠন সম্পাদক হিসাবে সংঘ পরিবারে কম্যুনিষ্টদের বিরুদ্ধে সংগঠিত বৌদ্ধিক আক্রমণের রূপকার হিসাবে তিনি সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শান্তনু সিংহের লেখা “ওরা শুধু ভুল করে যায়” বইটি তপনদারই মস্তিষ্কপ্রসুত যা কম্যুনিষ্টদের স্বরূপ উদ্ঘাটনের এক অসামান্য প্রামাণ্য গ্রন্থ।
গত ৪ঠা জুলাই ভেন্টিলেশনে যাবার আগে রাজা দেবনাথকে ফোন করে তিনি তাঁর শেষ বার্তা দিয়েছিলেন এবং সেটি রেকর্ড করতে বলেছিলেন। তপন ঘোষ তাতে বলেছেন, “ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু ঠাকুরের ইচ্ছা বা মা কালীর ইচ্ছা অন্যরকম। আমি এখন বিবেকানন্দ, ডাক্তারজি (আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা) গুরুজি(আরএসএসের প্রয়াত সরসংঘ চালক), গোবিন্দাচার্য, মা, বাবার আশীর্বাদ নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চাই। কোনও মৃত্যুভয় নেই। বার বার আসবো এই ভারত মায়ের কোলে। ভারত মাতা কি জয়।” তিনি আরও জানিয়েছিলেন, “আমার আগামী দিনের কাজ প্রকাশ চন্দ্র দাস এবং সৌরভ শাসমলকে বুঝিয়ে দিয়েছি তারা যা ঠিক করবে তাই হবে।”