সাথী দাস, আমাদের ভারত, পুরুলিয়া, ১৭ সেপ্টেম্বর: প্রাচীন মেলা পরব ছাড়াই পুরুলিয়ার চাকোলতোড় গ্রামে ঐতিহ্যবাহী ছাতা উঠল। বৃহস্পতিবার, বিকেলে নির্ঘণ্ট মেনে রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য অমিত লাল সিংদেও রাজবেশে সুসজ্জিত হয়ে মর্যাদার সঙ্গে সাদা কাপড়ের সংকেত দিয়ে এই প্রাচীন রীতি ধরে রাখলেন মুখে মাস্ক লাগিয়ে। সঙ্কেত পেতেই সাদা কাপড় দিয়ে তৈরি শান্তির চিহ্ন বহন করা গগনচুম্বী শান্তি বহনকারী ছাতা তুলে সূচিত হল আরও একটি ইতিহাসের। সঙ্কেত দিয়ে গৌরবের সঙ্গে বাড়ি ফেরেন তিনি। তার আগে দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো হয় ছাতা দণ্ডস্থলে। তবে, এবার প্রথমবার মেলা ছাড়া ছাতা উঠল। এবার যে মানব জীবনের রুজি রুটির সঙ্গে আনন্দ বিনোদন সবটাই কেড়ে নিয়েছে।
গত বার পর্যন্ত ছাতা টাঁড়ের মেলা ছিল জমজমাট, প্রজাদের আমোদ-প্রমোদ, নাচ, গান চলেছিল রাতভর।ওই মেলার অন্যতম বিশেষত্ব হল আদিবাসী বিশেষ করে সাঁওতাল, কোল, ভিল, মুণ্ডাদের ব্যবহৃত তির-ধনুক ও শিকারের নানা অস্ত্র এবং মনোরঞ্জনের জন্য ধামসা, মাদল প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র কেনা-বেচা হয় এখানে। এবার সেই চিত্রের ব্যাতিক্রম ঘটল।
এই বিষয়ে রাজা অমিতলাল সিং দেও বলেন, “এবার করোনা আবহাওয়া শুধুমাত্র রীতি ও পরম্পরা মেনে ছাতা তোলা হল। সরকারি নির্দেশ মেনে বিভিন্ন এলাকায় এবার মেলা না হওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য এবার পরিস্থিতি সবাইকে মেনে নিতে হবে। পরের বার একই জৌলুস থাকবে ছাতা পরবে।”
প্রায় তিন’শ বছর আগে এই পরবের সূচনা হয়। তখন ছিল পঞ্চকোট রাজ বংশ। কুমার শত্রুঘ্ন নামে একজন রাজা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে জঙ্গল মহলের ভূমিজ রাজা ইন্দ্র নারায়ণ সিংহের একবার যুদ্ধ বাধে। এলাকার একটি মাঠে সেই যুদ্ধ হয়েছিল। জঙ্গল মহলের রাজা ছিলেন বলে তাঁর সেনাবাহিনীতে ছিলেন আদিবাসীরা। কিন্তু, সেই যুদ্ধে ইন্দ্র নারায়ণ পরাজিত হন। তখন তাঁর সেনারা দিশেহারা ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কুমার শত্রুঘ্ন সেই সময় জানিয়ে দেন, বিপক্ষ সেনাদের সঙ্গে তাঁর শত্রুতা নেই, সবাই তাঁর প্রজা। রাজার শান্তির সঙ্কেত হিসেবে তখন আজকের দিনে মেলায় ধরা হয় বিশাল ছাতা। তার পর থেকেই প্রতিবছর ভাদ্র সংক্রান্তির দিন ছাতা তোলাকে কেন্দ্র করে এই মেলা বসে।
ছাতা পরবে সারারাত ধরে নানা ধরনের আদিবাসী সংস্কৃতি প্রদর্শিত হয়। এক সময় এই মেলাকে প্রেমের মেলা বলা হত। বহু যুবক যুবতী এখানে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেন। কার্যত স্বয়ম্বর সভায় পরিণত হয়। এবার আর তা হল না।