তীব্র আপত্তির জের! ভারতে পাওয়া করোনা প্রজাতির নতুন নামকরণ করল ‘হু’

আমাদের ভারত, ১ জুন : ভারত সরকারের তীব্র আপত্তির জেরে শেষ পর্যন্ত করোনার যে প্রজাতিকে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বলে প্রচার চলছিল তার নতুন নামকরণ করল ‘হু’। চলতি বছরের ১১ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু- জানায় কোভিড-১৯ এর বি১.১৬৭ প্রজাতি ভারতেই প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল। ‘হু’ এটিকে “ভাইরাস অফ গ্লোবাল কন্সার্ন” বলে উল্লেখ করে। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের সময় বি১.১৬৭ প্রজাতিকে “ ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট” বলে উল্লেখ করা হয়। আর তা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত হয় যা প্রায় তুঙ্গে ওঠে। এবার বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ভারতে প্রাপ্ত দুটি করোনা প্রজাতিকে কাপ্পা ও ডেল্টা নামকরণ করল ‘হু’।

তবে সংক্রমনের নামকরন নিয়ে বিতর্ক কোনও নতুন বিষয় নয়। এর আগেও এই বিষয় নিয়ে কূটনৈতিক বিতর্কে জড়িয়েছে বহু রাষ্ট্র। যেমন ২০০৯-এ ইজরাইলে পাওয়া অজানা ফ্লু –এর নাম দেওয়া হয় মেক্সিকান ফ্লু। তা নিয়ে ইজরায়েলে মেক্সিকান রাষ্ট্রদূত ঘোর বিরোধিতা করলে ইজরাইল মেক্সিকান ফ্লু নামটি প্রত্যাহার করে নেয়। একই ভাবে চিনের উহানে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ধরা পড়ে। এটিকে উহান ফ্লু বা উহান ভাইরাস নামে চিহ্নিত করা হতে থাকে, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের বক্তব্যে এই ধরনের নামের উল্লেখ বারংবার পাওয়া গেছে। চাইনিজ ভাইরাস, উহান ফ্লু, উহান ভাইরাস, সার্‌স কোভ-২, করোনা ভাইরাস, ২০১৯ এনকোভ প্রভৃতি নাম নিয়ে বহু আলোচনার পর অবশেষে, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ‘হু’ সরকারি ভাবে এর নাম কোভিড-১৯ বলে ঘোষণা করে।

রয়টার্স-এর সূত্র অনুযায়ী, ১২মে ভারতের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে সমস্ত স্যোসাল মিডিয়া কোম্পানিগুলিকে করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতিকে “ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট” বলে উল্লেখ করা প্রতিটি কন্টেন্টকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়।

এরপর ২১ মে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে কেন্দ্রীয় সরকারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, সব মিডিয়াকেই চিঠিতে ‘লাউড এন্ড ক্লিয়ার’ বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, এই ধরনের মিথ্যা খবর বিভ্রান্তিকর এবং দেশের সন্মানকে আঘাত করে।

এবার ভারত সরকার অভিযোগ আনার ঠিক তিন সপ্তাহ পর ৩১ মে ‘হু’ ভারতে পাওয়া বি.১.৬১৭.১ এবং বি.১.৬১৭.২ এর নামকরন করে। ইউ.এন.এ হেল্‌থ এজেন্সির তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, নন-সাইন্টিফিক মানুষজনের বোঝার এবং আলোচনার সুবিধার্থে, পর্যালোচনার প্রস্তাবনা অনুযায়ী এই ভ্যারিয়েন্টদের নাম গ্রিক বর্নমালার ‘ডেল্টা’ এবং ‘কাপ্পা’ রাখা হয়েছে। এই নামগুলি তাদের বিজ্ঞান্সম্মত নামের প্রতিস্থাপন নয়। তাছাড়াও ব্রিটেন, দঃ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে পাওয়া ভ্যারিয়েন্টদের নামও যথাক্রমে গ্রিক বর্নমালার ‘আলফা’ ‘বিটা’ ও ‘গামা’ রেখেছে ‘হু’।
প্রসঙ্গত, নতুন প্রজাতিকে “ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট” বলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঠিক তিন দিন আগেই ৯ মে সুপ্রিম কোর্টে কোভ্যাক্সিন সংক্রান্ত হলফনামায় ‘ইন্ডিয়ান ডবল মিউটেন্ট স্টেইন’ কথাটি উল্লেখ করেছিল ভারত সরকার নিজেই । তা নিয়ে সরকার পক্ষকেও বিরোধীদের তীর্যক মন্তব্যও হজম করতে হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *