ড. রাজলক্ষ্মী বসু
আমাদের ভারত, ১৬ জুন: সারা পৃথিবীতে একটাই পরিচিত শব্দ এখন, করোনা। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং প্রশাসনিক অপদার্থতায় এ রাজ্যে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছিল করোনা দানব। রাজ্য সরকার চিকিৎসা পরিষেবা দেবে না কি রেশনের চাল আত্মসাত করবে! না কি লক ডাউনের তোয়াক্কা না করা যে জনতা পুলিশ কে পদাঘাত দিতে অভ্যস্ত তাদের তোয়াজ করবে! চূড়ান্ত ব্যর্থতার ছবি সর্বত্র।
সেই অবসাদক্লিষ্ট পরিস্থিতিতে লকডাউনের প্রথম দিন থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নানান ক্ষেত্রে যথাসম্ভব স্বস্তি সহচার্য সাহায্য, সামাজিক দূরত্বেও মানসিক নিবিড়তা রক্ষার এক আপোসহীন, বিরামবিহীন অসম লড়াই করছে। না আছে রাজ্য সরকারের ন্যূনতম সহযোগিতা না আছে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা। কিন্তু রাজ্যের প্রান্তিক গ্রামেও ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মীরা তাদের হাত প্রসারিত করতে কার্পণ্য করেননি। প্রথম দফা লকডাউন ঘোষণার মাত্র দু’দিনের মধ্যেই রাজ্যবাসীর সুবিধার্থে এবং আঞ্চলিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করতে প্রথম জোটবদ্ধ হন এ রাজ্যের নির্বাচিত প্রত্যেক সাংসদ। তাঁদের প্রত্যেকের লোকাল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট ফান্ডস থেকে সর্বমোট ২০.৩ কোটি টাকার ভান্ডার অতি তৎপরতার সাথে এ রাজ্যের আপদে নিয়োজিত হয়। তখনও রাজ্য সরকার কোনও আর্থিক প্যাকেজ বা মহামারী যুদ্ধের ন্যূনতম ঢাল তলোয়ারই প্রস্তুত করতে পারেনি।
কতটা তৎপর প্রথম থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি, তার একটা নমুনা দিই। যখন একদিকে অজ্ঞাত কারণে কলকাতায় সংশোধনাগারে কয়েদির মৃত্যু হয়, তখন কি বিপরীত চিত্র মেলে ধরলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের মাননীয় সাংসদ। তাঁর এমপি ত্রাণের একাংশ ( ১০ লক্ষ টাকা) বর্ধমান সংশোধনাগারমুখী হয়। না, ছিল না প্রচারের আলো। তাতে কি আর কর্মযজ্ঞে ঘাটতি হয়? যেই না লকডাউন শুরু অমনি রাজ্যের নানান ক্ষেত্র থেকে আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষের উপর শুরু হয় নানান অন্যায়। যেমন বীরভূমের একটি চালকলে প্রায় ৪০০এরও বেশি শ্রমিককে আটকে বলপূর্বক তাদের দিয়ে কাজ করানোর সময় প্রশাসন ঘুমালেও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি র নজর এড়ায়নি। বিজেপি কর্মীদের তৎপরতায় প্রশাসনের শীতঘুম ভাঙে।
কোচবিহারের সাংসদ সরব হয়েছিলেন, বলপূর্বক চা বাগিচায় শ্রমিকের শ্রম নেওয়া নিয়ে। খোদ উত্তর কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে যখন স্যানিটাইজার, সাবান ইত্যাদির কিছুই পর্যাপ্ত ছিল না, সেদিন কিন্তু বিজেপিই যতটা সম্ভব করোনা সুরক্ষা কবচ মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছে। শহর থেকে পাহাড় সর্বত্র একই ভাবে হাত বাড়িয়েছে রাজ্য বিজেপি। দার্জিলিংয়ের বিধায়ক মহাশয়, প্রথম দফায় কমপক্ষে ৫০০০ মাক্স এবং ৫০০ স্যানিটাইজার প্রদান করেন ঐ অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষদের জন্য। প্রথম দফা লকডাউনের দু-তিন দিনের মধ্যেই রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা বিজেপির কার্যকর্তারা তড়িৎ গতিতে পথে নামেন। কেন্দ্রের নির্দেশে প্রত্যেক কার্যকর্তা নিজের অঞ্চলের (মন্ডল) দুঃস্হ পরিবারের জন্য ভোজনের বা রন্ধন সামগ্রী জোগানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে নানান প্রতিকূলতার সম্মুখীন তাঁরা। কখনও সামাজিক দূরত্ব না মানার মিথ্য ভিত্তিহীন অভিযোগ সাময়িক ভাবে হোঁচট দিলেও তা সামলে নেওয়া গেছে ইচ্ছাশক্তিতে।
কখনও আবার পুলিশ অনুমতি মেলায় হয়েছে পরিকল্পিত বিলম্ব। কিন্তু কর্মীদের আন্তরিকতায় কাল বিলম্ব না থাকায় সব জয় করা গেছে। তৃতীয় দফা লক ডাউনের ৪৫দিন পরেও যখন রাজ্য সরকার ঘর ছাড়া বাঙালিদের ঘরে ফেরাতে ব্যর্থ, তার বহু পূর্বেই মার্চের শেষ সপ্তাহেই রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে হেল্প লাইন নাম্বার খোলা হয়। যারা যেখানে অস্হায়ী অবস্থায় আটকে ছিলেন তাদের সংশ্লিষ্ট স্হানেই খাদ্য ও বসবাসের নিরপত্তা দেওয়া ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। রাজ্য বিজেপির সেল্ফ হেল্প গ্রুপ কলকাতা ও হাওড়ার আশেপাশে বস্তি এলাকায় অভুক্ত মানুষের জন্য এবং এখানে আটকে পরা ভিন রাজ্যের কর্মহীন অর্থহীন শ্রমিকদের পাশে থেকেছে। তাদের খাদ্য ও স্যানিটেশনের জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেছে এই গ্রুপ। এই কর্মকান্ড রাজ্যের প্রতি জেলায় বিস্তারিত হয়। লক্ষ্য ছিল রাজ্যের ৩০লক্ষ পরিবারের কাছে পৌঁছানো।
এতো বাধা বিপত্তির পরেও সে সংখ্যা হয়েছে ৩৫লক্ষ। পথ শিশু থেকে, গৃহহীন দুঃস্হ মাধুকরী কেউই ভারতীয় জনতা পার্টির নজর এড়ায়নি। কার্যকর্তা কর্মীরা একা ফ্ল্যাটে থাকা দাদু, ঠাম্মাদেরও ভোলেননি। তাঁদের জন্য বাজার বা খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, আঞ্চলিক কার্যকর্তার যোগাযোগ নাম্বার দিয়ে যে কোনও জরুরি পরিষেবাতেও প্রস্তুত ছিল এই রাজনৈতিক দল।
এই বিপদের সময় সামাজিক দায়বদ্ধতা যখন একটা রাজনৈতিক দলের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়, তখন তো ঘৃণ্য দুর্বৃত্তায়নে ভরা রাজ্য সরকার বা রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল তাকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবেই। করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের ভারতীয় জনতা পার্টি তাঁতিদের কথাও তুলে ধরেছে। শান্তিপুরের তাঁতশিল্পীদের পাশে ছিল বিজেপিই। অনলাইনে বস্ত্র বিক্রি এবং আর্থিক সাহায্যের জন্য আঞ্চলিক মন্ডলের কার্যকর্তারাই অগ্রসর হন। করোনা আক্রান্ত মালদায় এই দুর্যোগেও ঘটে আরো এক বিপদ। হরিশচন্দ্রপুরে করোনাতঙ্কে বাড়ি ভাঙ্গচুর হয়, মন্দিরের প্রণামী বাক্স লুট হয়। সেখানেও হাজার বাধা সত্ত্বেও বিজেপি সাংসদই যান। উত্তর দিনাজপুরে প্লাস্টিকযুক্ত ত্রাণের আটার বিরুদ্ধে সোচ্চার তো বিজেপিই হয়। চোখে পড়েছে এমন কতো দৃশ্য।
কৃষ্ণনগর অঞ্চলে বিজেপির কার্যকর্তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে খাদ্য বন্টন করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে তা পঞ্চায়েত স্তরেও প্রবেশ করে। ব্যারাকপুর অঞ্চলে বিজেপির যুব মোর্চার তরুণরা তৈরি করেছেন কমিউনিটি কিচেন। মানুষ যেন একটু স্বস্তি পান, এই টুকুই লক্ষ্য। আমডাঙা, নৈহাটি, শ্যামনগর, কাঁচরাপাড়া সর্বত্র শয়ে শয়ে দুঃস্হ মানুষ সামাজিক দূরত্ব মেনে পাত পেড়ে খাচ্ছেন। মুক্ত ভাবে ত্রাণ বিলিতে বহু ক্ষেত্রে বিজেপির কার্যকর্তারা বাধাপ্রাপ্ত হলে কোনও দলের পতাকা চিহ্ন ব্যতিরেকেই ‘সেভ বেঙ্গল’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে জনসেবা জারি রেখেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। কল্যাণী অঞ্চলে এই মডেল বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই মডেল দৈনিক প্রায় ৯০০ মানুষের মুখে খাদ্য জোগান দেয়। দেয় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
বীরভূমের হাসনে এই পরিস্থিতিতেও বিজেপি কর্মী খুন, মিথ্যা ফৌজদারি অভিযোগ, সব কিছু হাসিমুখে নিয়েই জনমুখী কর্মকান্ড চলছে। কারণ রাজনীতির পাশে সামাজিক দায়বদ্ধতা ভারতীয় জনতা পার্টির আদর্শে মজ্জাগত। সিভিলাইজেশনের যথার্থ অর্থ কি তা বোঝানোর সময় এসেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি তাদের জনমুখী ব্যবহারে প্রমাণ করবে এর অর্থ “সদাচার”। সব শ্লাঘা অতিক্রম করুক এই দরদী রূপায়ণ। সব বাধা অতিক্রম করে ভারতীয় জনতা পার্টির বিজয় শঙ্খ মন্দ্রিত হোক।
(তথ্য এবং মতামত লেখকের নিজস্ব।)